৩০–৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন সদস্য প্রার্থী, হেরে চাচ্ছেন ফেরত

আ. রাজ্জাক সরদার
ছবি: সংগৃহীত

জামালপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে জিততে এক সদস্য প্রার্থী ১৭১ জন ভোটারের মধ্যে ৯৮ জনকে ৩০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। তবে জয় নিশ্চিত করতে পারেননি। নির্বাচনে হেরে এখন ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) গিয়ে ভোটারদের কাছে টাকা ফেরত চাইছেন তিনি। টাকা ফেরত চাওয়ার বিষয়টি ওই প্রার্থী নিজে প্রথম আলোর কাছে স্বীকার করেছেন।

পরাজিত ওই প্রার্থীর নাম মো. আ. রাজ্জাক সরদার। তিনি জেলা পরিষদ নির্বাচনে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের (ইসলামপুর উপজেলা) সদস্য প্রার্থী ছিলেন। টিউবওয়েল প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ১৭১টি ভোটের মধ্যে ৪৮টি ভোট পেয়েছেন। রাজ্জাক ইসলামপুর উপজেলার গাইবান্ধা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছিলেন। ২০২১ সালের নভেম্বরে গাইবান্ধা ইউপি নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হন তিনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাজ্জাক চরপুটিমারী ও চরগোয়ালিনী ইউপির ভোটারদের কাছে যান। সেখানে তিনি আলাদা আলাদাভাবে ভোটারদের সঙ্গে টাকা ফেরত নিয়ে বৈঠক করেন। তবে এখনো কেউ তাঁকে টাকা ফেরত দেননি বলে দাবি করেছেন রাজ্জাক। টাকা ফেরত না পেলে টাকা নেওয়া ভোটারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণেরও হুমকি দিচ্ছেন পরাজিত এই প্রার্থী।

মো. আবদুর রাজ্জাক মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনে জয়-পরাজয়ে একটা সম্মানের বিষয় জড়িয়ে থাকে। তার মধ্যে এখনকার ভোটাররা টাকা ছাড়া ভোটও দেন না। সম্মানের কথা চিন্তা করে ভোটারদের টাকাও দিলাম। ১৭১ জন ভোটারের মধ্যে ৯৮ জনকে সর্বনিম্ন ৩০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার করে টাকা দিয়েছি। নির্বাচনের আনুষঙ্গিক আরও খরচ ছিল। সব মিলিয়ে ৪০ লাখ টাকার মতো খরচ করেছি। কিন্তু ভোট পেয়েছি মাত্র ৪৮টি। তাহলে বাকি ৫০ জন টাকা নিয়েও আমাকে ভোট দেননি। তাহলে অবশ্যই তাঁরা অন্য প্রার্থীর কাছ থেকে আরও বেশি টাকা নিয়ে ভোট দিয়েছেন।’

টাকা ফেরত চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজ্জাক আরও বলেন, ‘যখন টাকা ফেরতের জন্য তাদের (ভোটার) কাছে যাচ্ছি, এখন তারা সবাই বলতেছে, তারা সবাই নাকি আমাকে ভোট দিয়েছে। তারা সবাই যদি ভোট দিত, তাহলে আমি পরাজিত হলাম কীভাবে। এত বড় বেইমানি মানুষ কেমনে করে। দেখুন, টাকার বিষয় নয়, এসব ভোটারের মুখোশ উন্মোচনের জন্য টাকা ফেরত চাচ্ছি। তারা টাকা ফেরত না দিলে আমি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে ৩ নম্বর ওয়ার্ডে (ইসলামপুর) ১৭১ জন ভোটার ছিলেন। দুটি বুথে ১৬৯ জন ভোট দিয়েছেন। এর মধ্যে ৬৩ ভোট পেয়ে সদস্যপদে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন অটোরিকশা প্রতীকের মো. মজিবর রহমান। ৪৮ ভোট পেয়ে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন টিউবওয়েল প্রতীকের রাজ্জাক।

চরপুটিমারী ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আলাউদ্দিন আল আজাদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনের সময় ভোটারদের অনেকেই টাকা দেন। সেই হিসেবে ওই প্রার্থীও আমাদের সবাইকে টাকা দিয়েছেন। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাঁকে আমরা ভোটও দিয়েছি। নির্বাচনে হেরে গিয়ে এখন টাকা ফেরত চাচ্ছেন। এ নিয়ে ওই প্রার্থী দুবার পরিষদে টাকা নিতে আসছিলেন। তবে আমরা সবাই তাঁকে ভোট দিয়েছি। তাই টাকা ফেরত দেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না।’

জামালপুর জেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, আপাতদৃষ্টে সুষ্ঠু দেখা গেলেও টাকা দিয়ে ভোট কেনার মহোৎসব জেলা পরিষদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এটা শুধু ইসলামপুর নয়, সারা দেশে এ ঘটনা ঘটেছে। মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েও ভোট না পাওয়ার কথা উল্লেখ করে পরাজিত অনেক প্রার্থীই ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন। এতেই প্রমাণিত হয়, যাঁরা নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন, তাঁরা নিশ্চয় পরাজিত প্রার্থীর থেকে বেশি টাকায় ভোট কিনেছেন। একদিকে পরাজিত প্রার্থীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেন। আবার যাঁরা বিজয়ী হয়েছেন, তাঁরা দুর্নীতি করে নির্বাচনে খরচ হওয়া টাকা ওঠানোর চেষ্টা করবেন। তবে সাধারণ নাগরিকেরা এসব জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে ন্যূনতম সহযোগিতা পাবেন না।