‘মেয়েকে আর সজাগ করতে পারিনি’, বলে মায়ের আহাজারি

সিলেট সদর উপজেলার খাদিমনগরের একটি ঘরে শনিবার ভোররাতে টিলা ধসে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

টিলার মাটি ধসে বাড়ি ভেঙে গেছে। মাটির নিচে চাপা পড়ে মারা গেছে ১১ বছরের মেয়ে অর্চনা ছত্রী। অর্চনার মা-বাবা ও ছোট ভাই এখন অন্যের ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন।

শনিবার ভোররাতে সিলেট সদর উপজেলার খাদিম চা-বাগানের মোকাম কোনা মহল্লায় টিলার মাটি ধসে ঘরের ভেতর চাপা পড়ে মারা যায় অর্চনা ছত্রী। তার বাবা বুলবুল ছত্রী (৪০), মা উষা ছত্রী (৩০) ও ছোট ভাই সুব্রত ছত্রী (৪) প্রাণে রক্ষা পেয়েছে।

রোববার অর্চনার চাচার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বুলবুল ছত্রী ও উষা ছত্রী মেয়ের জন্য আহাজারি করছেন। উষা বলেন, ঘরের দুটি কক্ষে আলাদা দুটি বিছানা। তবে তারা চারজন প্রায়ই এক বিছানায় ঘুমাতেন। শুক্রবার রাতে তিনি ছেলে-মেয়েকে নিয়ে এক বিছানায় ঘুমিয়েছিলেন। বাচ্চাদের বাবা অন্য ঘরে ছিলেন। রাতে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছিল। রাত সাড়ে তিনটার দিকে মেয়ে ঘুম থেকে উঠে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাইরে গিয়েছিল। মেয়ে বাইরে থেকে ঘরে এসে বলেছিল, ঘুম পেয়েছে, ঘুমাতে যাচ্ছে। মেয়ে বিছানার পাশে যেতেই মাটি ধসে পড়ে। এরপর তিনি আর মেয়েকে সজাগ করতে পারেননি, এই বলে আহাজারি করছিলেন।

অর্চনার বাবা বুলবুল ছত্রী বলেন, টিলাটি বাড়ি থেকে প্রায় ৩০ গজ দূরে ছিল। সেটি যে এভাবে ধসে পড়বে, সেটি তিনি কল্পনা করেননি। তবে শনিবার প্রশাসনের লোকজন বলে গিয়েছিলেন, টিলার পাশে না থাকতে। এখন নতুন করে বাড়ি কোথায় বানাবেন, সেটি নিয়ে চিন্তিত তিনি।

টিলা ধসে মেয়ে অর্চনাকে হারিয়ে কান্না থামছে না বাবা বুলবুল ছত্রী ও মা উষা ছত্রীর
ছবি: প্রথম আলো

মোকাম কোনা মহল্লায় ঢুকতেই প্রেমানন্দ বড়াইয়ের ঘর। বাড়ির পাশে প্রায় ১৫০ ফুট উঁচু টিলা। ঘরের সামনে প্রেমানন্দের মা সনতি বড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি বলেন, ওই এলাকায় তাঁরাই প্রথম বাড়ি করেছেন। আগে এমন ঝুঁকিপূর্ণ ছিল না। এখন টিলার মাটি ধসে পড়ছে।

সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাছরীন আক্তার বলেন, বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে টিলা এলাকায় বসবাসকারীদের সতর্ক করা হচ্ছে। যাঁদের বাড়ি টিলায়, তাঁদের বাড়িঘর টিলা এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। নাগরিকদের সচেতন হতে হবে। নিজেদের নিরাপত্তার ব্যাপারে নিজেদেরই সতর্ক থাকতে হবে। জনসাধারণকে সতর্ক ও সচেতন করতে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন মাঠপর্যায়ে কাজ করছে।

গত বছরের ১৪ মে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মণাবন্দে টিলাধসে অপু পাল নামের এক যুবক চাপা পড়ে মারা যান। একই বছরের ৬ জুন জৈন্তাপুর উপজেলার সাতজনি গ্রামে একই পরিবারের চারজনের মৃত্যু হয়।