স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকের প্রচারণার গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর একজন সমর্থকের নির্বাচনী প্রচারণার গাড়ি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ভাঙচুর করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীর তিনজন সমর্থককেও তাঁরা মারধর করেছেন। সোমবার রাত আটটার দিকে বিজয়নগর উপজেলার চান্দুরা মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।

মারধরের শিকার হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের নেতা ফিরোজুর রহমানের সমর্থক উপজেলার ডালপার এলাকার বাসিন্দা এনামুল ইসলাম (২৬) ও ইছাপুরা গ্রামের নুরুল ইসলাম (৩১)। আহত আরেকজনের নাম জানা যায়নি। আর গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে ইছাপুরা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আক্তার হোসেনের।

উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ জানিয়েছে, উভয় পক্ষ থেকে মারধরের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ পেয়েছে তারা। দুপক্ষকেই লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। এই আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করা ফিরোজুর রহমান। সেটি না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তাঁর প্রতীক কাঁচি।

উভয় পক্ষের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার সাটিরপাড়া ও কালিবাড়ি মোড় এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী ফিরোজুরের একটি পথসভা হয়। সভা শেষে ফিরোজুরের সমর্থক আক্তার হোসেন নির্বাচনী প্রচারণার গাড়িতে করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। রাত সাড়ে আটটার দিকে চান্দুরা-আখাউড়া সড়ক দিয়ে চান্দুরা সিএনজি স্ট্যান্ডের সামনে পৌঁছালে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক এমদাদ সাগরের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁর গাড়ি আটকে ভাঙচুর করেন। এ সময় গাড়িতে থাকা এনামুল ও নুরুলসহ তিনজনকে মারধর করা হয়। খবর পেয়ে বিজয়নগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মেহেদী হাসান খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. বিল্লাল হোসেন ও বিজয়নগর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছান।

কাঁচি প্রতীকের সমর্থক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আমার ওপর হামলা করতে গাড়ি অবরোধ করে। পরে তারা গাড়ির সামনে-পেছনের কাচ ভাঙচুর করে। ভাঙা গাড়ি নিয়ে অভিযোগ করতে বিজয়নগর থানায় যাই। সেখানে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমাকে থানায় অভিযোগ না দিয়ে সহকারী কমিশনারের (এসি ল্যান্ড) কাছে অভিযোগ দিতে বলেন। এসি ল্যান্ডের কাছে অভিযোগ দিতে গেলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও সেখানে পৌঁছায়। তাঁর সামনেই ছাত্রলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা যাচ্ছেতাই ব্যবহারসহ আমাকে হুমকি দেয়।’

অভিযোগের বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন বলেন, ‘সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে উপজেলার ঋষিপাড়ায় উঠান বৈঠকে যাওয়ার পথে পেছন থেকে ছাত্রলীগের গাড়িতে কাঁচি প্রতীকের সমর্থকেরা ঢিল ছুড়ে ভাঙচুর করে। আমরা কোনো গাড়ি ভাঙচুর করিনি। আমরা লিখিত অভিযোগ দেব।’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিল্লাল হোসেন বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ছাত্রলীগের গাড়িতে এবং সাড়ে আটটার দিকে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের গাড়ি ভাঙচুরের বিষয়ে ছাত্রলীগ ও ইউপি চেয়ারম্যান পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দেন। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করা হবে।

সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বিজয়নগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা যতবার অভিযোগ করেছেন সহকারী কমিশনার ততবার গিয়ে ব্যবস্থা নিয়েছেন। উভয় পক্ষকেই লিখিতভাবে অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ও ওসি তদন্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।