ছাত্রের গাড়িতে চেপে প্রিয় শিক্ষকের অবসরযাত্রা

ছাত্রের গাড়িতে বাড়ি ফিরছেন শিক্ষক রেজাউল ইসলাম। গতকাল বুধবার নাটোরের গুরুদাসপুরেছবি: সংগৃহীত

টানা ৩২ বছর শিক্ষকতার পর অবসরে গেলেন নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চাপিলা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলাম। প্রিয় শিক্ষকের অবসর ঘিরে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে গতকাল বুধবার নানা আয়োজন করা হয়। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে সাবেক এক ছাত্রের সুজ্জিত গাড়িতে চেপে বাড়িতে ফেরেন প্রধান শিক্ষক।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল বেলা তিনটায় শিক্ষক রেজাউল ইসলামের অবসরজনিত বিদায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। শুরুতেই শিক্ষার্থী, শুভাকাঙ্ক্ষী ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা, মানপত্রসহ নানা উপহার দিয়ে প্রিয় শিক্ষককে সম্মাননা জানানো হয়। তারপর শুরু হয় স্মৃতিচারণামূলক বক্তব্য।

বক্তারা বলেন, ১৯৯২ সালে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। রেজাউল ইসলাম ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক। ছাপরাঘরে যাত্রা শুরু হওয়া বিদ্যালয়টিতে এখন আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। শিক্ষার্থী বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে শিক্ষার গুণগতমান। প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বশীলতার কারণে ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত এসএসসিতে উপজেলার সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মর্যাদা অর্জন করে চাপিলা উচ্চবিদ্যালয়। শিক্ষার পাশাপাশি ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বিদ্যালয়টির সুনাম রয়েছে। এর সবই সম্ভব হয়েছে রেজাউল ইসলামের প্রচেষ্টায়। যার কারণে উপজেলার সেরা প্রধান শিক্ষকও হয়েছিলেন তিনি।

বিদায়ী প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলামের হাতে মানপত্র তুলে দিচ্ছে এক শিক্ষার্থী। গতকাল নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চাপিলা উচ্চবিদ্যালয়ে
ছবি: সংগৃহীত

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি জাবেদ আলী সরকার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সেখানে বক্তব্য দেন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সেলিম আক্তার, সহকারী প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দিন, প্রবীণ শিক্ষক শুধাংশু কুমার, অভিভাবক আবদুল কুদ্দুস, চাপিলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান আলাল উদ্দিন প্রমুখ।

স্মৃতিচারণা করে বিদায়ী প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলাম বলেন, তিনি যখন বিদ্যালয়ের হাল ধরেছিলেন তখন ভাঙা ছাপরা ছিল। সবার সহযোগিতায় বিদ্যালয়টির অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বেড়েছে শিক্ষার মানও। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধিসহ ভালো ফলাফল করতে পালাক্রমে এসএসসি ও জেএসসি শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে রাতে নজরদারি করতেন তিনি। অনেক শ্রমের বিনিময়ে চাপিলা উচ্চবিদ্যালয় এখন আলোকিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

উত্তরসূরিদের উদ্দেশে রেজাউল ইসলাম বলেন, একজন প্রধান শিক্ষককে সবার আগে বিদ্যালয়ে আসতে হবে, সবার পর বিদ্যালয় ত্যাগ করতে হবে। পাশাপাশি সবার কথা শুনতে হবে, আবার কারোর কথাই শোনা যাবে না, তবেই প্রতিষ্ঠান ভালোভাবে চলবে। গুণগতমানের শিক্ষা নিশ্চিত হবে। ভবিষ্যতে যিনি তাঁর আসনে বসবেন, তাঁকেও এমন দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী জালাল উদ্দিন বলেন, শিক্ষক রেজাউল ইসলাম ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক, বিনয়ী ও সৎ মানুষ। তাঁর অনেক ছাত্র এখন বিভিন্ন দপ্তরে উচ্চ পদে চাকরি করছেন। তাঁর আদর্শের শিক্ষায় এখন তিনি সফল ব্যবসায়ী। প্রিয় শিক্ষক অবসরে যাওয়ায় তাঁর প্রাইভেট কার সুসজ্জিত করে সকালে তাঁর বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ে নিয়ে আসেন। আনুষ্ঠানিকতা শেষে আবার বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন। এ সময় সড়কের দুই পাশে শিক্ষার্থীরা দাঁড়িয়ে প্রিয় শিক্ষককে বিদায় জানান।