স্মার্ট কার্ড নিতে এসে খালি হাতে বাড়ি ফিরলেন সমসের আলী

স্ত্রীর সঙ্গে স্মার্ট কার্ড নিতে এসেছেন সমসের আলী (৯৬)। দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার কাটলা ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে শনিবার
ছবি: প্রথম আলো

বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন সমসের আলী। বয়স কাগজে–কলমে প্রায় ৯৬ বছর। শরীরে ভর দিয়ে চলতে পারেন না, হাতের লাঠিই ভরসা। তারপরও অন্যের সাহায্য নিয়ে চলতে হয়। শনিবার বেলা দুইটার দিকে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার কাটলা ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরের সামনের একটি পুকুর পাড়ে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তিনি।

সেখানে কথা হলে তিনি বলেন, স্মার্ট কার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্র নিতে এসেছেন। এখন সব সরকারি সুবিধা পেতে স্মার্ট কার্ড দেখতে চান কর্মকর্তারা। এ জন্য কষ্ট করে সে কার্ড নিতে এসেছেন তিনি। তবে দীর্ঘ সারি ও হুড়োহুড়িতে টিকতে পারেননি তিনি। কিছুক্ষণ পর আর দাঁড়াতে না পেরে বসে পড়েন ইউপি চত্বরে।

কাটলা ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ২৫ জানুয়ারি থেকে স্মার্ট কার্ড বিতরণ শুরু করে উপজেলা নির্বাচন দপ্তর। কাটলা ইউনিয়নের ১ থেকে ৩ নম্বর ওয়ার্ডে কার্ড ওই দিন বিতরণ করা হয়। শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ৪ থেকে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের লোকজন সারিতে দাঁড়ান।

স্থানীয়রা বলেন, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সারিতে শুরু হয় বিশৃঙ্খলা। নারী-পুরুষ আর বয়স্কদের জন্য শুধু একটি কক্ষেই সব কাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই কক্ষের ভেতরে একটি বুথের সামনে নারী-পুরুষের ধাক্কাধাক্কি। সেখানে টিকতে না পেরে সমসের আলী বের হয়ে আসেন। ২৫ জানুয়ারি এসেও তিনি ফিরে যান।

সমসের আলীর স্ত্রী সখিনা বেগম বলেন, ‘স্মার্ট কার্ড নেয়ার তনে হামরা স্বামী-স্ত্রী বৃহস্পতিবার সারা দিন ধরে বোর্ড অফিসত (ইউপি) থাকিছি। কার্ড না পায়ে (পেয়ে) বাড়িত ঘুরে গেইছি। আজকা আবার স্মার্ট কার্ড নেয়ার তনে আইছি। লাইনোত যে হুড়োহুড়ি, অসুস্থ বুড়া মানুষটাক নিয়ে ক্যাংকা করে লাইনোত থাকমো।’

ভিড় ও ধাক্কাধাক্কির কারণে বয়স্করা দীর্ঘ লাইন থেকে বের হয়ে ইউপি চত্বরে বসে অপেক্ষা করছেন
ছবি: প্রথম আলো

কথা বলে জানা যায়, সমসের আলী বিরামপুর উপজেলার কাটলা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের হরিহরপুর গ্রামের বাসিন্দা। স্মার্ট কার্ড নিতে শনিবার সকালে ভ্যানে করে চলে এসেছেন। সমশেরের সঙ্গে থাকা পুরোনো জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তাঁর বর্তমান বয়স ৯৫ বছর ১০ মাস। তাঁর এক ছেলে ও তিন মেয়ে। তাঁরা নিজ নিজ সংসার নিয়ে ব্যস্ত। অসুস্থ বাবা সমসের আলীর ভরণপোষণের দায়িত্ব কেউ নেননি। তিনি ২০ বছর ধরে পাটের দড়ি তৈরি ও বিক্রি করতেন। এখন অসুস্থ থাকায় সেই কাজ করতে পারেন না। এখন প্রতিদিন বিকেলে বাড়ির সামনে রাস্তা থেকে ভ্যানে চড়ে বাজারে যান। বাজারে অন্যের দোকানের বারান্দায় বসে মানুষের কাছে সাহায্য চান, যা পান তাই দিয়ে চলে সংসার। এখন সরকারের কোনো সুবিধা নিতে গেলে এ কার্ড দরকার হয়, তাই কার্ড নিতে এসেছেন তাঁরা।

সখিনা বেগম বলেন, ‘হামার স্বামী আগের মতো আর কামাই করবার পারে না। এখন নাকি সরকার থেকে কোনো কিছু পাবা গেলে স্মার্ট কার্ড নাগবে, তাই স্বামীকে নিয়ে আইচি। তবে আজকেও কার্ড পেলাম না।’

এদিকে স্মার্ট কার্ড বিতরণে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুরাদ হোসেন। তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের সহযোগিতায় নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা সারি ও বুথ করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।