ফেসবুকে লাইভে এসে আত্মহত্যার হুমকি শিক্ষিকার

নোয়াখালী জেলার মানচিত্র

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভে এসে নোয়াখালীর একটি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মানসিক নির্যাতন ও হেনস্তার অভিযোগ তুলেছেন ওই বিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষক। এ সময় আত্মহত্যার হুমকিও দেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত চারটার দিকে নিজের ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে এসে এ হুমকি দেন তিনি।

শিক্ষিকার অভিযোগ, গত ২২ মে বিদ্যালয়ে পাঠদানের সময় অফিস সহায়ককে ডেকে পানি খেতে চেয়েছিলেন তিনি। প্রধান শিক্ষক বিষয়টি নিয়ে তাঁর সঙ্গে অশালীন ব্যবহার করেন। তিনি এর প্রতিবাদ করায় তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। ওই চিঠির সন্তোষজনক জবাব দেওয়ার পরও তাঁকে দ্বিতীয় দফায় কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। সেটির জবাব দেওয়া হয়েছে; তবুও তাঁকে হয়রানি অব্যাহত রেখেছেন প্রধান শিক্ষক।

লাইভে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ কোচিং–বাণিজ্য চালিয়ে আসছেন। একইভাবে শিক্ষা বোর্ডের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সেশন ফি আদায় করছেন তিনি। এসব বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে প্রধান শিক্ষককে ফোন করা হয়। এরপর প্রধান শিক্ষক তাঁর বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে তথ্য দেওয়ার অভিযোগ তোলেন। পরে ১১ অক্টোবর মিথ্যা অভিযোগ তুলে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

নারী শিক্ষক বলেন, বরখাস্তের আদেশে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে তর্কাতর্কিতে লিপ্ত হওয়া, সভা চলাকালে উচ্চ স্বরে কথা বলা এবং চার বছরের শিশুসন্তানকে বিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়ায় পাঠদান ব্যাহত হওয়ার অভিযোগ আনা হয়। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠনের কথাও চিঠিতে বলা হয়।

তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা জানিয়ে ফেসবুক লাইভে ওই শিক্ষিকা বলেন, প্রধান শিক্ষকের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তিনি অনেকবার আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। তবে নিজের চার সন্তানের কথা চিন্তা করে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। বর্তমানে প্রধান শিক্ষকের অত্যাচার ও হয়রানি চরম পর্যায়ে পৌঁছায় তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছেন। এরই মধ্যে একটি সুইসাইড নোটও লিখে রেখেছেন তিনি।

ফেসবুকে ৫ মিনিট ৯ সেকেন্ড ধরে লাইভে ছিলেন তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষিকার বক্তব্য তিনি পুরোটা শুনেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করেছেন, তা মনগড়া। তিনি একক সিদ্ধান্তে ওই শিক্ষিকাকে কোনো চিঠি দেননি। বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় আলোচনা করে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের আলোকে তাঁকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং পরে তা প্রত্যাহারও করা হয়েছে।

প্রধান শিক্ষকের দাবি, ওই শিক্ষিকা একটি মহলের ইন্ধনে বিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ন করতে এসব করছেন। অভিভাবকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের কোচিং করানো হয়। এ ছাড়া কারও কাছ থেকে নতুন করে সেশন ফি আদায় করার অভিযোগ ভিত্তিহীন। তবে কোনো শিক্ষার্থী বছরের শুরুতে ভর্তির সময় যদি সেশন ফি না দিয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে তার কাছ থেকে ওই ফি পরে নেওয়া হয়।

বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নূর উদ্দিন মো. জাহাঙ্গীর প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষিকার ফেসবুক লাইভের বিষয়টি তিনি জানেন না। তবে তাঁকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা নিয়ে যে জটিলতা ছিল, সেটি গতকাল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামীমা বেগম বৈঠকের মাধ্যমে মীমাংসা করে দিয়েছেন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষিকা তাঁর কাছে কোনো অভিযোগ করলে তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।