‘আমার বুকের ধন হারিয়ে গেল’ বলে সুজনের মায়ের আহাজারি

লিবিয়ার দারনায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট বন্যায় নিহত বাংলাদেশিদের মধ্যে দুজনের বাড়ি রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলায়। তাঁদের একজন সুজন খান (২৪)। তাঁর বাড়ি পাংশার যশাই ইউনিয়নের ধোপাকেল্লা গ্রামে। সংসারে সচ্ছলতা আনতে লিবিয়ায় গিয়ে বন্যায় প্রাণ গেল তাঁর।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সুজনরা চার ভাই–বোন। সুজনের বাবা মারা গেছেন। বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। সংসারে সচ্ছলতা আনতে সুজন স্থানীয় এক দালালের মাধ্যমে লিবিয়ায় যান। তবে লিবিয়ার সার্বিক পরিস্থিতি ভালো নয়। এ কারণে খুব ভালো আয়রোজগার করতে পারেননি সুজন।

সুজনের ভাই জুবায়ের খান বলেন, সুজন ২০১৯ সালে লিবিয়ায় যান। সেখানে একটি ব্যাংকের বিভিন্ন জিনিসপত্র আনা–নেওয়ার কাজ করতেন তিনি। তাতে খুব বেশি আয় হতো না। সুজন রংমিস্ত্রির কাজ জানতেন। দেশে থাকতে রংমিস্ত্রির কাজ করতেন। লিবিয়ায় ব্যাংকের কাজ শেষ করে বাড়তি আয়ের জন্য রংমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন তিনি। বাড়িতে নিয়মিত টাকা পাঠাতে পারতেন না। ১০ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে সর্বশেষ ফোনে মা ও বোনের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। পরে লিবিয়াতে থাকা তাঁদের এক মামাতো ভাই গত মঙ্গলবার দুপুরে সুজনের মৃত্যুর খবরটি জানান।

ছেলের মৃত্যুর খবরে মা হাসিনা বেগমের কান্না থামছে না। কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘ও আমার বুকের ধন। আগামী বছর দেশে আসার কথা ছিল। অনেক স্বপ্ন ছিল। ফোনে বলতাম, বাড়িতে এলে তোর বিয়ে দেব। কীভাবে কী হয়ে গেল! আমার বুকের ধন হারিয়ে গেল।’

যশাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হোসেন খান বলেন, সুজনদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। অল্প বয়সে পরিবারের হাল ধরার জন্য বিদেশে যান সুজন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস!

পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, স্থানীয়ভাবে বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তবে এখনো বিস্তারিতভাবে বিষয়টি জানতে পারেননি। বিদেশে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ বা আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো দূতাবাস দেখভাল করে। তবে ভুক্তভোগী পরিবার প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদের সহায়তা করার চেষ্টা করা হয়।