নতুন চারটি ছানা পেয়ে সুস্থ হচ্ছে মা কুকুরটি

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রথমে দুটি ও পরে দুটিসহ মোট চারটি ছানা দেওয়া হয়েছে মা কুকুরটিকে। গতকাল দুটি ছানা দেওয়ার সময় উপজেলা পরিষদ চত্বরের সামনেছবি: প্রথম আলো

পাবনার ঈশ্বরদীতে আটটি কুকুরছানাকে বস্তাবন্দী করে পুকুরে ডুবিয়ে হত্যার পর মা কুকুরটি এদিক–সেদিক আহাজারি করছিল। ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যাচ্ছিল কুকুরটি। পরে অন্য স্থান থেকে এনে মা কুকুরটির কাছে চারটি ছানা দেওয়া হয়েছে। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়েছে কুকুরটি; দুধ পান করানোর পাশাপাশি ছানাগুলোকে নিয়ে ব্যস্ত আছে।

উপজেলার ‘ঈশ্বরদিয়ান’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বুধবার সংগঠনটির মুখপাত্র শাহরিয়ার অমিতের বাড়ির পাশের একটি পোষা কুকুরের কাছ থেকে দুটি ছানা এনে এই কুকুরকে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

এ ছাড়া আজ বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) উপস্থিতিতে কুকুরটির কাছে দুটি নতুন ছানা রেখে যান স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা। তাঁরা জানান, নতুন ছানা দুটির মা মারা গেছে। তাই এগুলোকে বাঁচাতে এই কুকুরের কাছে রাখা হয়েছে।

শাহরিয়ার অমিত জানান, তাঁর সংগঠন বেশ কিছুদিন ধরেই কুকুর-বিড়ালের দেখভালসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড করছে। তাঁদের কিছু পোষা কুকুর আছে। উপজেলা পরিষদ চত্বরে আটটি কুকুরছানা হত্যার খবরে তাঁরাও সেখানে ছুটে যান। মা কুকুরটির আর্তনাদ ও শোক দেখে তাঁদের কষ্ট লেগেছে। তখন তাঁরা কুকুরটিকে শান্ত করার উপায় খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁর বাড়ির সামনে ৭টি ছানার মধ্য থেকে দুটিকে ছানা হারানো কুকুরটিকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। গতকাল দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) উপস্থিতিতে ছানা হারানো কুকুরটির বুকে নতুন দুটি ছানা তুলে দেওয়া হয়।

নতুন ছানাদের বুকে জড়িয়ে বিশ্রাম নিতে দেখা গেছে মা কুকুরটিকে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

প্রথমে মা কুকুরটির বিশ্বাস অর্জন করা একটু কঠিন ছিল জানিয়ে শাহরিয়ার অমিত বলেন, শুরুতে মা কুকুরটির বুক থেকে কিছু দুধ সংগ্রহ করে নতুন ছানা দুটিকে খাওয়ানো হয়। এতে নতুন ছানার শরীরে ওই মায়ের গন্ধ লেগে যায়। পরে ছানা দুটিকে মা কুকুরটি সাদরেই গ্রহণ করেছে। নতুন দুই ছানাকে নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটছে তার।
আজ দুপুরে ছানা হারানো মা কুকুরটিকে দেখতে গিয়েছিলেন শাহরিয়ার অমিত। সঙ্গে ছিলেন এই প্রতিবেদকও। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, মা কুকুরটি আগের তুলনায় বেশ সুস্থ। সে নিজেও খাচ্ছে এবং নিয়মিত চার ছানাকে দুধ পান করাচ্ছে। মাঝেমধ্যে ছানাদের সঙ্গে খেলছেও।

কুকুরের বর্তমান অবস্থা দেখে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ঈশ্বরদীর ইউএনও মো. মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘আট ছানা হারানোর পর কুকুরটির কান্না থামানো যাচ্ছিল না। নতুন করে ছানা পাওয়ার পর মা কুকুরটি বেশ ভালো আছে। আমরা নিয়মিত কুকুরগুলোর খোঁজখবর নিচ্ছি। ওগুলোকে নিয়মিত খাবার ও চিকিৎসা দিচ্ছি।’

আরও পড়ুন

সম্প্রতি ঈশ্বরদী উপজেলার ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমানের সরকারি বাসার আঙিনায় ৮টি ছানার জন্ম দেয় মা কুকুরটি। গত সোমবার সকালে কুকুরটিকে পরিষদ চত্বরে ছোটাছুটি করতে ও কাঁদতে দেখা যায়। একপর্যায়ে একটি পুকুর থেকে ওই ছানাগুলোর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় উপজেলা ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমানের স্ত্রী নিশি রহমানের বিরুদ্ধে ছানাগুলোকে হত্যার অভিযোগ ওঠে। পরে গত মঙ্গলবার রাতে ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন বাদী হয়ে নিশি রহমানকে আসামি করে থানায় একটি মামলা করেন। ওই রাতেই গ্রেপ্তার হন নিশি। বুধবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে তাঁকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।