রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ
সড়কে উড়ছে ধুলাবালু, ভোগান্তি
গোয়ালন্দ উপজেলার একটি সড়ক নির্মাণের কাজ গত বছরের ৩০ মার্চ শেষ হওয়ার কথা, কিন্তু আজও সেই কাজ শেষ হয়নি।
নির্ধারিত সময়ের এক বছর পরও রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার উত্তর দৌলতদিয়া থেকে জাতীয় মহাসড়ক হয়ে উজানচর জিসি ভায়া চর দৌলতদিয়া সড়কের কাজ শেষ হয়নি। পিচঢালাই করার কথা থাকলেও ঠিকাদার শুধু ইটের খোয়া ফেলে কাজ বন্ধ করে চলে গেছেন। এতে উঁচু–নিচু হয়ে থাকায় এবং ধুলাবালু ওড়ায় ওই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন দুই ইউনিয়নের ২০ হাজার মানুষ।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) গোয়ালন্দ উপজেলা কার্যালয় জানায়, ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি এলজিইডি রাজবাড়ীর নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় ‘ঢাকা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের (ডিডিআইআরডব্লিউএসপি)’ আওতায় জাতীয় মহাসড়ক হয়ে উজানচর জিসি ভায়া চর দৌলতদিয়া পর্যন্ত ৮ দশমিক ৬৬৬ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়।
ঠিকাদার দুই দফা আবেদন করে সময় বাড়িয়েছেন। দ্রুত সময়ে তাঁদের কার্পেটিংয়ের কাজ করতে বলেছি।
ফরিদপুরের ইমতিয়াজ আসিফ-এমএ ইঞ্জিনিয়ারিং (জেভি) নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ১৩ কোটি ৪৮ লাখ ৩৬ হাজার ৯৮৬ টাকা চুক্তিমূল্যে ওই সড়ক নির্মাণের কাজটি পায়। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর কাজ শুরু করে ২০২৩ সালের ৩০ মার্চের মধ্যে শেষ করার কথা। কিন্তু ঠিকাদার এক বছর আগে ইটের খোয়া দিয়ে সড়ক সমান করে রাখার পর আর কোনো কাজ করেননি।
গতকাল শুক্রবার সড়কের উজানচর নতুনপাড়া থেকে চর দৌলতদিয়া পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায়, সড়কে ধুলাবালু উড়ছে। সড়কের দুই পাশের ঘরবাড়ি ও গাছপালার ওপর ধুলাবালুর মোটা আস্তরণ পড়ে গেছে। সড়ক দিয়ে চলাচলের সময় মোটরসাইকেল, ইজিবাইকসহ বিভিন্ন যানবাহনের আরোহীরা ধুলাবালুর কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। উজানচর ও দৌলতদিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দারা সড়কটি ব্যবহার করেন।
উজানচর ইউনিয়নের নতুনপাড়ার বাসিন্দা ওহেদুল ইসলাম বলেন, ধুলাবালুর কারণে ঘরে কোনো খাবার রাখা যায় না, সব নষ্ট হয়ে যায়।
শামসু মণ্ডলের বাজারের ব্যবসায়ী গোলজার হোসেন বলেন, ধুলাবালুতে দোকানে বসে থাকা যায় না। কাপড় দিয়ে আটকেও ধুলা ঠেকানো যাচ্ছে না। ধুলাবালুর কারণে ক্রেতারা দোকানে বেশিক্ষণ টিকে থাকতে না পেরে চলে যান। এ ছাড়া রাস্তার কাজের মান নিয়েও এলাকাবাসীর প্রশ্ন রয়েছে।
উজানচর মাখন রায়পাড়ার স্কুলশিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘রাস্তার কাজ ফেলে রাখায় এমন ধুলা হইছে বাড়ি-ঘরে থাকতে পারছি না। পানি ছিটালে কিছুক্ষণ পর আবার আগের মতো হইয়া যায়। আপনারা পারলে কিছু লেইখা তাড়াতাড়ি সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা করেন।’
উজানচর ইউপির সাবেক সদস্য ও আ.লীগ নেতা নিখিল চন্দ্র রায় বলেন, রাস্তা দিয়ে স্বাভাবিকভাবে যখন মোটরসাইকেল বা অটোরিকশা যায়, তাতেও ধুলাবালু ওড়ায় সমস্যা হয়। ঠিকাদার দীর্ঘদিন কাজ ফেলে রাখায় তাঁদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
উজানচর ইউপির চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন মৃধা বলেন, ‘জনগণের সমস্যার কথা শুনতে শুনতে আমি অতিষ্ঠ। ঠিকাদার ও উপজেলা প্রকৌশলীকে বললে তাঁরা শুধু বলেন, “দ্রুতই কাজ শেষ হবে”, কিন্তু হচ্ছে না তো। বিষয়টি রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলীকেও জানিয়েছি।’
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইমতিয়াজ আসিফ-এমএ ইঞ্জিনিয়ারিং (জেভি)–এর অংশীদার মো. সিদ্দিক বলেন, ‘দ্রুত ওই সড়কের কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু করব। আমরা সেই প্রস্তুতিই নিচ্ছি।’
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য গতকাল উপজেলা প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার দাসের মুঠোফোনে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। তবে কয়েক দিন আগে এ প্রতিবেদককে তিনি বলেছিলেন, ‘নির্ধারিত সময় শেষ হলেও ঠিকাদার দুই দফা আবেদন করে সময় বাড়িয়েছেন। দ্রুত সময়ে তাঁদের কার্পেটিংয়ের কাজ করতে বলেছি।’
ওই সড়কের কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা এলজিইডির গোয়ালন্দ কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকশৌলী গোঞ্জর আলী শেখ বলেন, ঠিকাদারের লোকজন তিন-চার দিন ধরে রাস্তায় জমে থাকা ময়লা–আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ শুরু করেছে।