নাব্যতা–সংকটে লঞ্চ বন্ধ

এই পথে আগে তিনটি লঞ্চে যাত্রীরা চলাচল করতেন। কিন্তু ব্রহ্মপুত্র নদে নাব্যতা–সংকটে গত জুলাই থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ।

বালাসী-বাহাদুরাবাদ নৌপথে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন যাত্রীরাছবি: প্রথম আলো

ব্রহ্মপুত্র নদে নাব্যতা–সংকটে গাইবান্ধার বালাসী-বাহাদুরাবাদ নৌপথে ৯ মাস ধরে লঞ্চ চলাচল বন্ধ। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় মানুষ ইঞ্জিনচালিত নৌকায় চলাচল করছেন। তবে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ছাউনি না থাকায় রোদ-বৃষ্টিতে যাত্রীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। 

গাইবান্ধা রেলস্টেশন সূত্র জানায়, ১৯৩৮ সালে ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখঘাট-জামালপুরের বাহাদুরাবাদ নৌপথ চালু হয়। তখন থেকে এ রুটে ঢাকা-দিনাজপুর রেল যোগাযোগ চালু ছিল। উত্তরাঞ্চলের আট জেলার মানুষ ট্রেনযোগে তিস্তামুখঘাটে যেতেন। নাব্যতা–সংকটের কারণে ১৯৯০ সালে তিস্তামুখঘাটটি একই উপজেলার বালাসীতে স্থানান্তর করা হয়। তখন থেকে বালাসী-বাহাদুরাবাদ রুটে একইভাবে রেল যোগাযোগব্যবস্থা চালু ছিল। নাব্যতা হ্রাসের কারণে ১৯৯৬ সাল থেকে বালাসী-বাহাদুরাবাদ রুটে রেলওয়ের ফেরি চলাচল বন্ধের উপক্রম হয়ে যায়। এরই মধ্যে ১৯৯৮ সালের জুনে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হয়। ফলে ২০০০ সাল থেকে এ রুটে রেলের ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তখন থেকে প্রায় ২২ বছর বালাসী-বাহাদুরাবাদ রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। অবশ্য শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে পারাপার অব্যাহত ছিল। 

সম্প্রতি এ রুটে লঞ্চসেবা চালুর জন্য স্থানীয় জনগণের দাবির মুখে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) উভয় পাশে ১৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নৌ টার্মিনাল নির্মাণ করে। দীর্ঘ ২২ বছর পর ২০২২ সালের ৯ এপ্রিল গাইবান্ধাবাসীর বহু প্রত্যাশিত লঞ্চসেবা চালু হয়। উদ্বোধনের পর থেকে তিনটি লঞ্চ অনিয়মিত চলত। পাশাপাশি ছোট–বড় ১৫ থেকে ২০টি নৌকায় যাত্রী পারাপার চলছিল। ব্রহ্মপুত্র নদে নাব্যতা হ্রাসের কারণে ৯ মাস ধরে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে।

■ গাইবান্ধা থেকে এই নৌপথে ঢাকা যেতে সাত ঘণ্টা লাগে।

■ সড়কপথে ৯ ঘণ্টা ও রেলপথে ১০ ঘণ্টা লাগে।

■ লঞ্চমালিকেরা ব্রহ্মপুত্র নদ খননের দাবি জানিয়েছেন।

এলাকাবাসী জানান, গাইবান্ধা থেকে নৌকায় বালাসী-বাহাদুরাবাদ রুট হয়ে ঢাকা গেলে সময় কম লাগে। এ পথে সময় লাগে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা। সড়কপথে ৯ ঘণ্টা ও রেলপথে ১০ ঘণ্টা। বালাসীঘাট থেকে জামালপুর জেলার বাহাদুরাবাদ ঘাট পর্যন্ত বর্ষা মৌসুমে প্রায় ছয় মাস নৌকা চলে। বাকি ছয় মাস প্রায় শুকনা মৌসুম। এ সময় কিছু অংশ বালুচর এবং বাকি অংশ শ্যালোচালিত নৌকায় পারাপার হতে হয়। বাহাদুরাবাদ থেকে ময়মনসিংহ হয়ে কম সময়ে গাইবান্ধার মানুষ ঢাকা যাতায়াত করছেন। নাব্যতা–সংকট ও ডুবোচরের কারণে নৌকায় চলাচলও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। 

গত বুধবার বিকেলে সরেজমিন দেখা গেছে, শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকায় যাত্রীদের ভিড়। ঢাকা থেকে আসা মানুষ তড়িঘড়ি করে নৌকা থেকে নামছেন। কেউ কেউ নৌকার জন্য অপেক্ষা করছেন। সবাই নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন। 

ফুলছড়ি উপজেলার মদনেরপাড়া গ্রামের কলেজশিক্ষক রোকন মিয়া বলেন, ‘ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় যাত্রী পারাপার হচ্ছে। আমি নিজেও নৌকায় পারাপার হয়ে ঢাকা থেকে এসেছি। একই গ্রামের মেহেদী হাসান বলেন, মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেশি। ট্রেনের টিকিট পাওয়া দুষ্কর। এ কারণে ঘরমুখী মানুষ নৌকার ওপর নির্ভরশীল হয়েছেন। এ সুযোগে নৌকায় জনপ্রতি বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। তিনি ৩৫০ টাকা দিয়ে নৌকায় পার হয়ে ঢাকা থেকে বাড়ি এসেছেন।’

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বালাসীঘাটের ইজারাদার অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন বলেন, নদে ডুবোচর জেগে ওঠায় লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে, তাই নৌকায় যাত্রীর চাপ বেড়েছে। এই পথে প্রতিদিন ৩০-৩৫টি নৌকা চলাচল করে। এসব নৌকায় ৯ থেকে ১০ হাজার মানুষ চলাচল করেন। 

এ প্রসঙ্গে গাইবান্ধা বালাসী-বাহাদুরাবাদ লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আরিফ মিয়া বলেন, এই নৌপথের অর্ধশতাধিক স্থানে ডুবোচর জেগে উঠেছে। নাব্যতা–সংকটের কারণে লঞ্চ চালানো যাচ্ছে না। লঞ্চ নিয়মিত চালাতে নদী খনন করতে হবে। বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্যকেও জানানো হয়েছে, কিন্তু তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। 

এসব বিষয়ে গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গাইবান্ধার বালাসী থেকে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদের তলদেশে টানেল নির্মাণ অথবা বহুমুখী সেতু নির্মাণে জাতীয় সংসদে একাধিকবার প্রস্তাব দিয়েছি। এই প্রস্তাব বাস্তবায়নে কাজ করছি।’ তিনি আরও বলেন, টানেল নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত এ রুটে লঞ্চ ও নৌকা চলাচল স্বাভাবিক রাখতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।