চট্টগ্রামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে প্রাইভেট কার ছিটকে পড়ে একজনের মৃত্যু

এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ছিটকে নিচে পড়ে যাওয়া প্রাইভেট কার। আজ বিকেলে চট্টগ্রামের নিমতলা মোড়েছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম নগরের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে একটি ব্যক্তিগত গাড়ি (প্রাইভেট কার) ছিটকে নিচে পড়ে গেছে। এতে মোহাম্মদ শফিক (৫৫) নামে একজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে নগরের নিমতলা এলাকায় বন্দর থানার সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন বন্দর থানার উপপরিদর্শক মো. মাসুদ। তিনি বলেন, হঠাৎ একটি প্রাইভেট কার এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ছিটকে সড়কে পড়ে যায়। এতে একজন নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন। নিহত মোহাম্মদ শফিক সাইকেল আরোহী ছিলেন। তিনি এক্সপ্রেসওয়ের নিচ দিয়ে যাচ্ছিলেন।

মো. মাসুদ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি থানার ভেতরেই ছিলেন। হঠাৎ একটি বিকট শব্দে তিনিসহ পুলিশের অন্য সদস্যরা থানা থেকে বের হন। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন, একটি গাড়ি উল্টে পড়ে আছে। গাড়ি থেকে চারজন ব্যক্তি নেমে আসেন, তাঁরা সামান্য আহত হয়েছিলেন।

সহকারী পুলিশ কমিশনার (বন্দর) মাহমুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, গাড়িটি যে স্থান থেকে ছিটকে পড়েছে, সেখানে বাঁক রয়েছে। এক্সপ্রেসওয়ের রেলিংয়ের ওপর দিয়ে তীব্র গতিসম্পন্ন গাড়িটি নিচে পড়ে যায়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, গাড়িটি বেপরোয়া গতিতে চলছিল।

এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা এবারই প্রথম নয়। গত বছরের আগস্ট মাসে পরীক্ষামূলক চালুর পর দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন দুই মোটরসাইকেল আরোহী। চলতি নভেম্বর মাসেই দুটি প্রাইভেট কার উল্টে যায় এই উড়ালসড়কে। মূলত ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বাঁক, চালকদের গতিসীমা না মানা এবং বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালানোর কারণে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সিডিএ বলছে, এগুলো স্বাভাবিক বাঁক। চলাচলে কোনো ঝুঁকি নেই। গতিসীমা না মেনে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে।

সরেজমিন ঘুরে ও যানবাহনচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে নির্ধারিত গতিসীমা মানা হচ্ছে না। ফাঁকা পেলেই সেখানে দ্রুতগতিতে চলছে যানবাহন। নিষেধাজ্ঞা থাকলেও চলছে মোটরসাইকেল। এ নিয়ে গতকাল বুধবার প্রথম আলোয় ‘বেপরোয়া গতিতে চলে গাড়ি, বাড়ছে ঝুঁকি’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

সিডিএ সূত্র জানায়, এক্সপ্রেসওয়েতে সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ধারণ করা হয় ৬০ কিলোমিটার। তবে আঁকাবাঁকা অংশে সর্বোচ্চ গতিসীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে ৪০ কিলোমিটার। এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি থামানো বা দাঁড় করিয়ে রাখা এবং গাড়ি থেকে নামা নিষিদ্ধ। পরীক্ষামূলক যান চলাচলের সময় সাময়িকভাবে ট্রাক, বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। তবে বর্তমানে চলছে মোটরসাইকেল।

সরেজমিন দেখা যায়, এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলাচলরত গাড়ির অধিকাংশই সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল। এ ছাড়া বড় একটি অংশ কার ও মাইক্রোবাস। চলাচলের সময় অধিকাংশ গাড়িই গতিসীমা মেনে চলছে না। গতিসীমার মাপার জন্য কোথাও নেই যন্ত্র বা ক্যামেরা। কিছু স্থানে গতিরোধক থাকলেও নির্ধারিত গতির চেয়ে বেশি গতিতে গাড়ি চালাচ্ছেন চালকেরা।

চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত সাড়ে ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ের দেওয়ানহাট, বারিক বিল্ডিং, সল্টগোলা, ইপিজেড, কাঠগড় এলাকায় বাঁক রয়েছে। বাঁকগুলোতেও গাড়ির গতি কমানোর প্রবণতা কম চালকদের। এক্সপ্রেসওয়ের অনেক জায়গায় গাড়ি থামিয়ে যাত্রীরা বের হয়ে আসেন। ঝুঁকিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতেও দেখা যায়। এসবের কারণে সেখানে প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে।

আরও পড়ুন