নিজের চোখে শিশুর লাশ ভাসতে দেখেন পপি মজুমদার
ডোবার দিকে আঙুল উঁচিয়ে পপি মজুমদার বললেন, ‘ওইখানে শিশুটি ভাসছিল। আমার স্বামী দেখে লোকজন খবর দেন। তারপর কয়েকজন ধরাধরি করে সড়কের পাশে এনে রাখেন।’
আজ রোববার বেলা পৌনে ১১টা। ফেনী সদরের লালপোল এলাকার উত্তর গোবিন্দপুর গ্রামের কাছে পৌঁছালে লোকজনের জটলা চোখে পড়ে। এগিয়ে গিয়ে হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা গেল। চোখ মুছছিলেন পপি মজমুদার। বলেন, ‘আমারও দুই ছেলে। শিশুটার হাত–পা আমার ছেলের মতো। কে জানে, কার বুক খালি হলো।’
পপি জানান, ১০টার দিকে ডোবা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। শরীরের ভেতর পানি ঢুকে একদম ফুলে গেছে। শিশুটার বয়স পাঁচ বছরের বেশি হবে না।
শিশুটির মুখের ওপর গামছা দিয়ে রেখেছেন জয়নাল মিয়া। বর্ণনা শুনে গামছা সরানোর সাহস হলো না। জয়নাল বলেন, চোখ দুটো ফুলে সাদা হয়ে গেছে। খুবই খারাপ অবস্থা।
ফেনীর মানুষ স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার সাক্ষী হয়েছে। ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, পরশুরাম, ফেনী সদর, দাগনভূঞা ও সোনাগাজী—এ ছয় উপজেলা পুরোপুরি বন্যাকবলিত। গ্রামের পর গ্রাম ডুবে আছে। বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের গেছে অসংখ্য মানুষ। তাই বাড়িঘর অনেকটাই জনমানবশূন্য। এর মধ্যে সরকারি হিসাবেই ফেনীর বন্যায় অন্তত দুজন মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আজ পাওয়া গেল আরও এক লাশ।
তবে পপি মজুমদারের দাবি, গতকাল শনিবার দুপুরে তাঁর স্বামী সুমন চন্দ্র আরও একটি লাশ পেয়েছিলেন। স্থানীয় ব্যক্তিদের লাশটি বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
শিশুটার লাশ নিয়ে স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন মো. হান্নান। তিনি বলেন, ‘সবাই এলে সমন্বিতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পানির জন্য কোথাও যাওয়া যাচ্ছে না। মোবাইলের নেটওয়ার্কও পাওয়া যাচ্ছে না অনেক জায়গায়।’
সবুর আলী গোবিন্দপুর গ্রামেরই বাসিন্দা। তিনি জানালেন, ওই এলাকায় বন্যার পানির স্রোত বেশি ছিল।
পানি উঠে গিয়েছিল দোতলা পর্যন্ত। অনেকেই আটকে ছিলেন। আবার পুরোনো কিছু বসতঘর ভেসে গেছে। ধারণা করছেন, পানির স্রোতের সঙ্গে গত দুদিন আগেই শিশুটি তলিয়ে গেছে। কারণ, শিশুটার পুরো শরীর সাদা হয়ে গেছে।