বন্যায় জকিগঞ্জ ও কানাইঘাটের অনেক এলাকা প্লাবিত, ভোট হবে কি
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চতুর্থ ধাপে আগামীকাল বুধবার সিলেটের জকিগঞ্জ ও কানাইঘাটে ভোট গ্রহণ করা হবে। তবে চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে উপজেলা দুটির অনেক গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়েছে। জকিগঞ্জের এক চেয়ারম্যান প্রার্থী ভোট গ্রহণ পেছানোর আবেদন করেছেন। যদিও নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, যথাসময়ে ভোট নেওয়া হবে।
গত ২৯ মে মধ্যরাত থেকে ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের নয়টি উপজেলা ও নগরে বন্যা পরিস্থিতির তৈরি হয়। এর মধ্যে জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলাও আছে। গত দুই দিন এ দুই উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও এখনো অনেক গ্রাম ও রাস্তাঘাট পানিতে নিমজ্জিত।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ছয়টায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের তথ্য অনুযায়ী, জেলার সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর চারটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এর মধ্যে সুরমা নদীর কানাইঘাট উপজেলার কানাইঘাট পয়েন্টে ৬১ সেন্টিমিটার এবং কুশিয়ারা নদীর জকিগঞ্জের অমলশিদ পয়েন্টে ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
দুই উপজেলার একাধিক ভোটার জানান, অনেক গ্রাম এখনো প্লাবিত। রাস্তাঘাট ও গ্রামীণ হাঁটাচলার পথও তলিয়ে আছে। অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রের সামনে ও আঙিনায় পানি জমে আছে। বানভাসি হওয়ায় ভোট দেওয়ার মতো মানসিকতায় মানুষজন নেই। এ ছাড়া অনেক ভোটারের পক্ষে পানি মাড়িয়ে কেন্দ্রে যাওয়াও কঠিন হবে। বিশেষত নারী ও বয়স্ক ভোটারদের বেশি সমস্যায় পড়তে হবে।
এ বিষয়ে সিলেটের জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, যথাসময়েই ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তবে জকিগঞ্জ উপজেলার ৫টি কেন্দ্র এবং কানাইঘাট উপজেলার ৪টি কেন্দ্র বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়ায় বিকল্প কেন্দ্রের তালিকা নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। বিকল্প কেন্দ্রগুলোকে কমিশন অনুমোদন দিলে প্লাবিত কেন্দ্রগুলোর বদলে নতুনগুলোতে ভোট নেওয়া হবে।
নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা গেছে, জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলায় ২৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন। এর মধ্যে জকিগঞ্জে চেয়ারম্যান পদে চারজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে চারজন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ছাড়া কানাইঘাট উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে সাতজন, ভাইস চেয়ারম্যন পদে চারজন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুজন নির্বাচন করছেন।
জকিগঞ্জের চেয়ারম্যান প্রার্থী মরতুজা আহমদ (আনারস) প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর উপজেলার ৭৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩০টি কেন্দ্রেই বন্যার পানি আছে। উপজেলার অন্তত ১৫০টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় সেসব গ্রামের বাসিন্দারা পানিবন্দী সময় কাটাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন স্থগিতের অনুরোধ জানিয়ে গত শনিবার তিনি সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফসানা তাসলিমের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।
এ বিষয়ে আফসানা তাসলিম বলেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী সামনে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা আছে। তাই ভোট গ্রহণের বিষয়টি নির্দিষ্ট তারিখেই শেষ করার উদ্দেশ্যে কাজ চলছে।
এদিকে প্রতিদিনের মতো গতকালও জেলা প্রশাসন বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে। বেলা দেড়টায় পাঠানো এ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, জকিগঞ্জের নয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এবং কানাইঘাটের আট ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা বন্যাকবলিত। জকিগঞ্জে ১১০টি এবং কানাইঘাটে ১৯০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া জকিগঞ্জে ১ লাখ ৫১ হাজার ৭৯৮ জন এবং কানাইঘাটে ৮০ হাজার ৬০০ জন বন্যায় কবলিত।
সিলেটের জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরুল হাসান বলেন, ‘দুটি উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা নির্বাচন কমিশনকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি। তাই বুধবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, এমনটা ধরে নিয়েই সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে।’