আলী ইউসুফ একটি ছাপাখানার মালিক। নিজের জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী, সন্তানের জন্মদিনসহ বিশেষ বিশেষ দিন তিনি উদ্যাপন করেন স্বেচ্ছায় রক্তদান করে। তিন বছর আগে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, ছেলেরা প্রাপ্তবয়স্ক হলে তাঁরাও বিশেষ দিবসে স্বেচ্ছায় রক্তদান করবেন। আজ সোমবার আলী ইউসুফ ও কোহিনূর আক্তার দম্পতির ২০তম বিবাহবার্ষিকী। এ উপলক্ষে তাঁদের বড় ছেলে মাহিন ইউসুফ আজ স্বেচ্ছায় রক্তদান করেছেন।
মাহিনের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে। এর মধ্যে তিনি নিজের জন্মদিনে প্রথমবার ও আজ দ্বিতীয়বার স্বেচ্ছায় রক্তদান করলেন।
মাহিন ইউসুফ বলেন, ‘আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন থেকেই দেখেছি, আমার বাবা মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকেন। বাবার স্বপ্ন, আমরাও যেন তাঁর মতো মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকি। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর যেন স্বেচ্ছায় রক্তদান করি, এটা ছিল বাবার একটা ইচ্ছা। যে কারণে আজ মা–বাবার বিবাহবার্ষিকীতে আামি দ্বিতীয়বারের মতো স্বেচ্ছায় রক্ত দিলাম।’
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিসঞ্চালন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আজ বিকেলে মাহিন ইউসুফ ক্যানসার আক্রান্ত একজন অসহায় নারীর জন্য রক্ত দান করেছেন। ওই বিভাগের চিকিৎসক ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আলী ইউসুফ ময়মনসিংহের একজন পরিচিত স্বেচ্ছাসেবী। তিনি এখন পর্যন্ত ৫০ বারের বেশি রক্ত দিয়েছেন। নিজের ৫০তম জন্মদিনে ৫০ জন স্বেচ্ছাসেবীর রক্ত সংগ্রহ করে আমাদের দিয়েছেন।’
মাহিনের বাবা আলী ইউসুফ পেশায় ব্যবসায়ী হলেও ময়মনসিংহের মানুষের কাছে তিনি স্বেচ্ছাসেবী হিসেবেই পরিচিত। করোনার সংকটের সময় তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত মানুষের লাশ স্বেচ্ছায় দাফন করেছেন।
আলী ইউসুফ বলেন, নিজে ৫৮ বার স্বেচ্ছায় রক্ত ও একবার প্লাটিলেট দান করেছেন। অনেক রোগী নিজেদের সংকটের সময় রক্ত পান না। এ কারণে তিনি রক্তদান করেন। তাঁর স্ত্রী কোহিনূর আক্তারও এ পর্যন্ত ৯ বার স্বেচ্ছায় রক্ত দান করেছেন।
আলী ইউসুফ ও কোহিনূর দম্পতি জানান, তাঁদের তিন ছেলে। ছেলেদেরও পরোপকারী হিসেবে গড়ে তুলতে চান তিনি। তিন ছেলের মধ্যে মাহিন ১৮ বছরে পা দিয়েছে। বাকি দুজন এখনো অপ্রাপ্তবয়স্ক। প্রাপ্তবয়স্ক হলে তারাও স্বেচ্ছায় রক্তদানসহ মানুষের সেবায় নিয়োজিত হবে বলে মা–বাবার আশা।