প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ইউপি সদস্যের পরিকল্পনায় গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ

ধর্ষণ
প্রতীকী ছবি

একটি হত্যা মামলা থেকে বাঁচার কৌশল হিসেবে বাদীপক্ষকে চাপে ফেলতে নিজ পক্ষের এক গৃহবধূকে (৩৮) পরিকল্পিতভাবে ডেকে এনে ধর্ষণ করানোর অভিযোগ উঠেছে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার পলাশবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের একজন সদস্যের বিরুদ্ধে। তাঁর নাম আকিদুল ইসলাম (৩৫)। তিনি ওই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য।

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থানা সূত্রে জানা গেছে, ১৯ মার্চ রাত সাড়ে দশটার দিকে আলফাডাঙ্গা উপজেলার আটকবানা গ্রামের একটি মাঠে ধর্ষণের শিকার হন ওই গৃহবধূ। ২২ মার্চ ধর্ষণ ও সহযোগিতার অভিযোগে মামলা করেন তিনি।

ওই গৃহবধূর বাড়ি মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায়। তবে ঘটনাস্থল আলফাডাঙ্গা এলাকার মধ্যে হওয়ায় তাঁকে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করতে হয়।

মামলায় পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন আলফাডাঙ্গা উপজেলার দক্ষিণ চরনারানদীয়া গ্রামের আতর আলী গাজী (৫৫), ধুলঝুড়ি গ্রামের কাবুল শেখ (২২) ও খালিদ মোশারফ রঞ্জু (৫০) এবং মহম্মদপুর উপজেলার পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নের কালিশংকরপুর গ্রামের বাসিন্দা ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আকিদুল ইসলাম (৩৫) ও একই গ্রামের নান্নু মিয়া (৪৫)। তাঁদের মধ্যে আতর আলী গাজীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও অন্যদের বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ১৬ মার্চ মহম্মদপুর উপজেলার কালিশংকরপুর গ্রামে প্রতিপক্ষের লোকজন আরিফুল মোল্যা (৩৪) নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করেন। আরিফুল ইউপি সদস্য আকিদুল ইসলামের প্রতিপক্ষের লোক।

ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ ইউপি সদস্যের পক্ষের এক ব্যক্তির স্ত্রী। খুনের ঘটনার পর বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাটের ভয়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাবার বাড়ি মহম্মদপুর উপজেলায় চলে যান ওই গৃহবধূ।

১৯ মার্চ সন্ধ্যায় মুঠোফোনে কল করে জরুরি কাজের কথা বলে মোটরসাইকেল পাঠিয়ে তাঁকে আলফাডাঙ্গা থানার আটকবানা গ্রামে নিয়ে যান ইউপি সদস্য আকিদুল ইসলাম। সেখানে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করেন আতর আলী গাজী। পরে ইউপি সদস্য আকিদুল ইসলামসহ অন্যরা ওই গৃহবধূকে তাঁর স্বামীর বাড়ির কাছে নিয়ে যান। এরপর ইউপি সদস্য আকিদুল ইসলাম প্রতিপক্ষের কয়েকজনকে আসামি করে ধর্ষণের মামলা করার জন্য ওই গৃহবধূকে চাপ দেন। মামলা না করলে তাঁর স্বামীকে আরিফুল মোল্যার হত্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন।

পরে মহম্মদপুর থানা–পুলিশ ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি সন্তানদের নিয়ে এখন বাবার বাড়িতে আছেন। ওই খুনের মামলায় তাঁর স্বামীকে আসামি করা হয়েছে।

আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবু তাহের মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, একটি খুনের মামলার বাদীপক্ষের লোকজনকে ফাঁসাতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছেন। অভিযোগ পাওয়ার পর ২২ মার্চ মূল অভিযুক্ত আতর আলী গাজীকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ভুক্তভোগী নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন ও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।

মহম্মদপুর থানা–পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, লাশবাড়ীয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলজার হোসেন ও সাবেক চেয়ারম্যান রবিউল ইসলামের সমর্থকদের মধ্যে পূর্ববিরোধের জেরে আরিফুল মোল্যাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

আরিফুল মোল্যা কালিশংকরপুর চর পাড়ার হাসান মোল্লার ছেলে। পেশায় তিনি পেশায় দিনমজুর ও পলাশবাড়িরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলজার হোসেনের অনুসারী। এ হত্যার ঘটনায় ১৮ মার্চ নিহত আরিফুলের বড় ভাই কোবাদ মোল্যা মহম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এতে পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য রবিউল ইসলামকে এক নম্বর এবং একই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আকিদুল ইসলামকে দুই নম্বর আসামি করা হয়। মামলার এজাহারে ২২ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ১০ থেকে ১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।

মহম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অসিত কুমার রায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, খুনের মামলায় এখনো কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। সবাই পলাতক।