সংসদ সদস্যের বক্তব্য থামিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা বললেন, ‘দলের বারোটা বাজাবেন না’

সংসদ সদস্যের বক্তব্যের সময় হাত উঁচিয়ে প্রতিবাদ করছেন খুলনার কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম মহসীন রেজা। গত বুধবার কয়রার কলনা আমিনিয়া ফাজিল মাদ্রাসা মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

খুলনার কয়রায় জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন আওয়ামী লীগ দলীয় স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান। হঠাৎ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জি এম মহসীন রেজা সংসদ সদস্যকে হাতের ইশারায় থামিয়ে উচ্চস্বরে বলেন, ‘অনেক হয়েছে, আপনি এভাবে আর দলের বারোটা বাজাবেন না।’

তাঁর কথার সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত নেতা-কর্মীরাও শোরগোল শুরু করেন। তাৎক্ষণিক সংসদ সদস্য বক্তব্য শেষ করে বসে পড়েন। ঘটনাটি ঘটেছে গত বুধবার বিকেলে কয়রা উপজেলার কলনা আমিনিয়া ফাজিল মাদ্রাসা মাঠে। ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ভিডিওতে দেখা যায় খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনের সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান বলছেন, ‘আওয়ামী লীগ হচ্ছে গণমানুষের দল। এখানে কর্মীদের উচ্ছ্বাস থাকবে। কর্মীরা স্লোগান দিয়ে এগিয়ে আসবে। স্লোগান হচ্ছে এই দলের প্রাণ।’
ওই সময় কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম মহসীন রেজা দাঁড়িয়ে সংসদ সদস্যকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘এখানে উসকানি দেবেন না। উসকানিমূলক বক্তৃতা দিলে হবে না। আপনি আর দলের বারোটা বাজাবেন না। অনেক করেছেন। আমরা কিন্তু এত দিন কোনো কথা বলিনি। আপনি উসকানি দেবেন না।’

ওই দিন সভায় উপস্থিত ছিলেন কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিশিত রঞ্জন মিস্ত্রি। তিনি আজ শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, বুধবার সন্ধ্যার আগমুহূর্তে সভাস্থলে স্থানীয় সংসদ সদস্য কিছু ছেলেপেলে নিয়ে প্রবেশ করেন। ওই ছেলেরা সংসদ সদস্যের নামে স্লোগান দিচ্ছিলেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি স্লোগান বন্ধের আহ্বান জানান। কিন্তু তাঁর আহ্বানে সাড়া না দিয়ে স্লোগান অব্যাহত রাখেন সংসদ সদস্যের অনুসারীরা। পরবর্তী সময় সংসদ সদস্যের বক্তৃতার মধ্যে স্লোগানধারী অনুসারীদের পক্ষে সাফাই গাইতে শুরু করেন। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি উত্তেজিত হয়ে প্রতিবাদ জানালে সংসদ সদস্য বক্তৃতা শেষ করেন।

এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মহসীন রেজা জানান, শোকের মাসের অনুষ্ঠানগুলোয় সংসদ সদস্য প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ জনকে নিয়ে যান। তাঁরা শুধু সংসদ সদস্যের বক্তব্যের সময়ই স্লোগান দেন। অন্য নেতাদের বেলায় দেন না। এতে সভায় উপস্থিত দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের যে অপমান করা হয়, তা সংসদ সদস্য বুঝতে চান না। মহসীন রেজা বলেন, ‘সেদিন প্রোগ্রামের সময়ও একই কাজ করলে আমি নিষেধ করেছি। আর সংসদ সদস্য উসকানিমূলক কথা বলতে শুরু করলে প্রতিবাদ করি।’

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামানকে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করে ব্যস্ত আছেন বলে কেটে দেন।

সংসদ সদস্যের অনুসারী হিসেবে পরিচিত উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাফরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ওইদিন সভায় তিনিও উপস্থিত ছিলেন। তবে সেখানে সংসদ সদস্যের নামে কোন স্লোগান দেওয়া হয়নি। এমনকি সংসদ সদস্য নিজেই জ্যেষ্ঠ নেতাদের বক্তৃতার সময় স্লোগান দিয়েছেন।

সংসদ সদস্যের সঙ্গে দ্বন্দ্ব আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, বর্তমান সংসদ সদস্যের সঙ্গে তাঁদের কোনো বিরোধ নেই। তবে সংসদ সদস্য কোনো বরাদ্দ পেলে দলের নেতা-কর্মী নিয়ে আলোচনা ছাড়াই ঘরে বসে নিজের অনুসারীদের নিয়ে ভাগবাটোয়ারা করেন। টিআর, কাবিখা, পানির ট্যাংক, টিউবওয়েল—কোথায় দিচ্ছেন কিছুই তাঁরা জানেন না। এটা তাঁরা মানতে পারেন না।

উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাফরুল ইসলাম বলেন, বরাদ্দ বন্টনে সংসদ সদস্য সঠিক নিয়ম অনুসরণ করেন। তবে আগামী নির্বাচনে অনেকেই দলীয় মনোনয়ন চাইছেন। তাদের কেউ কেউ সংসদ সদস্যকে হেয় করতে বিষয়টি ভিন্নভাবে উপস্থাপন করছেন।