মনু নদের পাড়ে কাশবনে সাদা মেঘের রাজ্য

মনু নদের পাড় ঘেঁষে ফুটেছে কাশফুল। শুক্রবার বিকেলে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার রায়শ্রী গ্রামেছবি: প্রথম আলো

সবুজ গ্রামের ভেতর নদের পাড়ে কাশফুলের সাদা মায়া—এমন দৃশ্য এখন মৌলভীবাজারের মনু নদপাড়ের রায়শ্রী গ্রামে। মনে হয় যেন নীল আকাশের নিচে কেউ পেতে রেখেছে সাদা চাদর, অথবা একটুকরা কাশবন এখানে সাদা মেঘের মতো যেন জমে আছে। বাতাসে নেচে ওঠা ফুলের সারি শরতের বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে চারপাশে।

মৌলভীবাজার শহর থেকে মাত্র তিন-চার কিলোমিটার দূরে এই কাশবন। মনু সেতু পার হয়ে চাঁদনীঘাট থেকে পূর্বমুখী মনু ব্যারেজের দিকে একটি পাকা সড়ক চলে গেছে। সেই সড়ক ধরে দেড়-দুই কিলোমিটার এগোলেই এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের দেখা মেলে। নদপাড়ের এই কাশবন, যেখানে বাতাসের স্রোতে দুলে ওঠে কাশফুলের সারি। এমন এক দৃশ্য, যা পথিককে টেনে নেয় কাছে।

কেউ ছবি তুলছেন, কেউ এদিক-ওদিক ঘুরছেন
ছবি: প্রথম আলো

শুক্রবার বিকেলে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, আকাশে ভাসছে ছাইরঙা মেঘ, এই বুঝি ঝরঝরিয়ে বৃষ্টি নামবে। তখন তো ‘চলে নীল শাড়ি নিঙাড়ি নিঙাড়ি পরান সহিত মোর’ ধরনের আকাশ থাকার কথা। এমন শরতে ঝকঝকে নীল আকাশকেই তো মানায়। কিছুক্ষণ পর এই রোদ এই মেঘের ছায়ার ভেতর ইলশেগুঁড়ির মতো বৃষ্টি ঝরেছে পথে। বৃষ্টিভেজা বাতাসে কাশফুলগুলো ঝরঝরে হয়ে উঠছে, যেন রোদে স্নান করা কিশোরী। মৃদু বাতাসের গায়ে হেলান দিয়ে এদিকে-ওদিকে দুলছে। কিছু মুনিয়া আর চড়ুই এসে বসছে কাশের ঝোপে, আবার উড়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যেন এক স্বপ্নিল দৃশ্যপট।

আরও পড়ুন

স্থানীয় বাসিন্দা মো. আমির বলেন, কয়েক দিন আগে কাশবন আরও ঘন ছিল। তবে ঝোড়ো বৃষ্টিতে কিছু কাশফুল নুয়ে পড়েছে, কিছু কেটে নেওয়া হয়েছে। তবু এখনো অনেকখানি জায়গা সাদা ফুলে ঢেকে আছে।

আকাশে জমেছে মেঘ। কাশবনে বৃষ্টি নামার আগে
ছবি: প্রথম আলো

স্থানীয় লোকজন বলেন, রায়শ্রীর এ জায়গা একসময় ছিল নির্জন বালুচর। নদীর পাড়ে বিন্না ঘাসের ঝোপ আর কিছু বুনো লতাগুল্ম জন্মাত। ওই ঝোপঝাড়ে সাপসহ নানা রকম প্রাণী আশ্রয় নিত। বর্ষা এলে সবকিছু আবার পানিতে তলিয়ে যেত, পলি–বালিতে ঢাকা পড়ত। কিন্তু কয়েক বছর ধরে এখানকার প্রকৃতি বদলে গেছে। ভাদ্রের শেষ থেকে কার্তিক পর্যন্ত এখানে কাশফুলে ঢেকে যায় চারপাশ। তবে কার্তিকে সাদার উজ্জ্বলতা কিছুটা কমে আসে। শরৎ শেষ হলে এই সাদা বনপরিরা ডানা মেলে কোথায় যেন চলে যায়। পাশের নদটিও নির্বিকার থাকে। কখনো পানি ফুলেফেঁপে কিছুটা তেজি হয়ে ওঠে, কখনো চুপচাপ নিজের মতো দূর গন্তব্যের দিকে বয়ে যেতে থাকে।

আরও পড়ুন
বৃষ্টিতে কিছু কাশফুল নুয়ে পড়েছে
ছবি: প্রথম আলো

মনু নদপাড়ের এই কাশবনে বিকেলের দিকে ধীরে ধীরে ভিড় বাড়তে থাকে। কেউ মোটরসাইকেলে, কেউ সাইকেলে, কেউবা পায়ে হেঁটে আসে। দল বেঁধে আসে তরুণ-তরুণীরা। কেউ সেলফি তোলে, কেউ অন্যের ছবি তোলে। কাশবনের বাতাসে তখন ভেসে আসে আনন্দের গুঞ্জন। প্রকৃতি আর মানুষ মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় সাদা মায়ার জগতে। প্রকৃতির সঙ্গে বেড়ে ওঠা মানুষেরা হয়তো এখানে খুঁজে ফেরে প্রাণের হারানো উচ্ছ্বলতা, আনন্দ।

আরও পড়ুন