পাবনার দুর্গাপ্রতিমা সাজবে বারেকের বানানো চুলে

শণপাট রাঙিয়ে চুল তৈরি করছেন পাবনার বেড়ার মাছখালি গ্রামের আবদুল বারেক। ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে পূজার আগে আগে দেড় থেকে দুই মাস এই কাজ করেন তিনি
ছবি: প্রথম আলো

বাঙালি হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার আর বেশি দিন বাকি নেই। মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে। প্রতিমাশিল্পীরা নিপুণ হাতে প্রতিমা তৈরি করতে পারলেও সাজসজ্জার কাজটি তাঁরা করেন না। চুল, পোশাকসহ সাজসজ্জার জিনিসগুলো বাইরে থেকে কিনতে হয়। সব জায়গায় এই চুল পাওয়া যায় না, সবাই আবার এই চুল বানাতেও পারেন না। হাতেগোনা এমন কারিগরদের একজন পাবনার বেড়া উপজেলার মাছখালি গ্রামের আবদুল বারেক (৬৫)।

বারেক তাঁর ছেলে, ছেলের বউ, মেয়েসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শুধু দুর্গাপূজার আগে আগে চুল তৈরির কাজ করেন। কাজটি করছেন ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে। সেগুলো দিয়েই পাবনার বেশির ভাগ দেব-দেবীর চুলের সজ্জা করা হয়। এ ছাড়া রংপুর ও দিনাজপুর এলাকায়ও যায় তাঁর বানানো চুল। চুল তৈরি করে পূজার আগের দেড় থেকে দুই মাসে তাঁদের আয় থাকে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা।

কীভাবে চুল বানানোর কাজটি করেন, জানতে চাইলে আবদুল বারেক বলেন, চুল তৈরির প্রধান উপকরণ হলো শণপাট। প্রতি মণ সাধারণ পাটের দাম দুই হাজার টাকা হলেও বিশেষ ধরনের এ পাট কিনতে হয় পাঁচ হাজার টাকায়। এবার রংপুর ও দিনাজপুরের চারজন মহাজন তাঁকে ১৩ মণ শণপাট কিনে দিয়েছেন। দুর্গাপূজা শুরুর ১৫ দিন আগেই পর্যায়ক্রমে ওই পাটে চুল তৈরি করে মহাজনদের বুঝিয়ে দিতে হবে। এ জন্য ভালো পারিশ্রমিক পাওয়া যাবে। এ ছাড়া তিনি ব্যক্তিগতভাবেও তিন থেকে চার মণ শণপাট কিনে চুল তৈরি করছেন। এগুলো স্থানীয় প্রতিমাশিল্পীদের কাছে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করবেন। চুল তৈরির জন্য শণপাট রং ও রাসায়নিক মেশানো পানিতে চুবিয়ে সেদ্ধ করতে হয়। এরপর রোদে শুকিয়ে কিছুটা পরিচর্যা করে নিলেই তা ব্যবহারের উপযোগী হয়।

সম্প্রতি আবদুল বারেকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর বাড়ির সবাই চুল তৈরির কাজে ব্যস্ত। তাঁদের কেউ রং মেশানো পানিতে পাট সেদ্ধ করছেন, কেউ সেদ্ধ করা কালো কুচকুচে পাট রোদে শুকাচ্ছেন। কাজের একফাঁকে আবদুল বারেক বলেন, ‘বছরে মাত্র দেড়-দুই মাস আমরা এই কাজ করি। সারা বছর এই কাজ থাকলি সংসারে কুনু অভাব থাকত না।’

বারেক তাঁর ছেলে, ছেলের বউ, মেয়েসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শুধু দুর্গাপূজার আগে আগে চুল তৈরির কাজ করেন
ছবি: প্রথম আলো

পাবনা জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সহসভাপতি সুবল রায় বলেন, ‘দেব-দেবীর মাথার চুল তৈরির কাজটি হাতে গোনা কয়েকজন করে থাকেন। এর মধ্যে বেড়ার মাছখালি গ্রামের আবদুল বারেকের কাজের দীর্ঘদিনের সুনাম।’