মহা অষ্টমীর স্নানে লাখো পুণ্যার্থীতে মুখর লাঙ্গলবন্দ

নারায়ণগঞ্জ বন্দর এলাকার লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদে অষ্টমীর স্নানে আসা পুণ্যার্থীরা। বুধবার দুপুরে লাঙ্গলবন্দের রাজঘাটে
ছবি: দিনার মাহমুদ

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদে সনাতন হিন্দুধর্মাবলম্বীদের মহা অষ্টমী পুণ্যস্নানে লাখো পুণ্যার্থীর ঢল নেমেছে। মঙ্গলবার রাত ৯টা ১৭ মিনিট ৩ সেকেন্ডে স্নানের লগ্ন শুরু হলেও পুণ্যার্থীদের ঢল নামে আজ বুধবার সকাল থেকে।

দেশ-বিদেশের কয়েক লাখ পুণ্যার্থীর পদচারণে মুখর হয়ে উঠেছে পুরো লাঙ্গলবন্দ এলাকা। তাঁরা পাপমুক্তির বাসনায় ব্রহ্মপুত্র নদে স্নানে নেমেছেন। স্নানের লগ্ন শেষ হবে আজ রাত ১০টা ৪৭ মিনিট ১৩ সেকেন্ডে। আয়োজকেরা জানিয়েছেন, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুণ্যার্থীদের চাপ বাড়ছে।

এদিকে লাঙ্গলবন্দের স্নানে পুণ্যার্থীদের আসার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সকাল থেকে ধীরগতিতে চলছে যানবাহন।

লাঙ্গলবন্দ স্নান উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি সরোজ কুমার সাহা প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, মালদ্বীপসহ দেশি-বিদেশি পুণ্যার্থীরা লাঙ্গলবন্দে পুণ্যস্নানে এসেছেন। রাতে লগ্ন শুরু হলেও সকাল থেকে পুণ্যার্থীদের ঢল নেমেছে। সব মিলিয়ে গতবারের মতো এবারও ১০ লাখের বেশি পুণ্যার্থী স্নানোৎসবে এসেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, আজ সকাল থেকে মহা অষ্টমী স্নানোৎসবে অংশ নিতে লাঙ্গলবন্দের তিন কিলোমিটার এলাকায় ঘাটগুলোতে পুণ্যার্থীরা ভিড় করেন। নারী-পুরুষ পুণ্যার্থীরা সড়ক পথ ও নৌপথে স্নানে অংশ নিতে আসেন। পুণ্যার্থীরা ললিত সাধুর ঘাট, অন্নপূর্ণা মন্দিরঘাট, নাসিম ওসমানঘাট, গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর মন্দির রাজঘাট, কালীগঞ্জ ঘাট, মাকরী সাধুর শান্তি আশ্রমঘাট, মহাত্মা গান্ধীর শশ্মানঘাট, ভদ্রেশ্বরী কালীমন্দির ঘাট, জয়কালী মন্দিরঘাট, রক্ষাকালী মন্দিরঘাট, পাষাণকালী মন্দিরঘাট, স্বামী দ্বিগিজয় ব্রহ্মচারীর আশ্রম, চর শ্রীরামপুর ব্রহ্মাঘাট, দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি ঘাট, মীরকুণ্ডি পরেশ সাধুঘাট, সাবদী রক্ষাকালী ঘাট, তাজপুর-জহরপুর মুনি ঋষিপাড়া ঘাট ও লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রমঘাটে স্নানে আসেন। ঘাটগুলোতে পুরোহিতের কাছে মন্ত্রপাঠ করে স্নানে নেমে পড়েন তাঁরা। এদিকে স্নান উপলক্ষে লাঙ্গলবন্দে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

পাপমুক্তির আশায় আসা পুণ্যার্থীরা। বুধবার সকালে লাঙ্গলবন্দ এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

লাঙ্গলবন্দের মন্দিরগুলোতে চলছে পূজা-অর্চনা ও ভক্তিমূলক গান। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো থেকে পুণ্যার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে খিচুড়ি, দুধ, পানিসহ বিভিন্ন খাবার। অষ্টমীর স্নান উপলক্ষে লাঙ্গলবন্দ এলাকাজুড়ে চলছে উৎসবমুখর পরিবেশ।

কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরীপুর থেকে এসেছেন পুরোহিত প্রাণকৃষ্ণ। তিনি বলেন, পুণ্য লাভের আশায় পুণ্যার্থীরা মন্ত্র পাঠ করে ধান, দুর্বা, বেলপাতা, আম্রপল্লব, ফুল, হরীতকী, ডাবসহ এখানে স্নান করতে আসেন। গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া থেকে স্নানে আসা কৃষ্ণা রানী বলেন, ‘নিজের জানা-অজানা সব পাপমোচনের জন্য ভগবানের কাছে প্রার্থনা করেছি।’

চট্টগ্রামের বাঁশখালী থেকে এসেছেন ৬৫ বছর বয়সী শম্ভুনাথ দাস। তিনি বলেন, ‘স্ত্রী, ছেলে ও ছেলের বউকে নিয়ে স্নান করতে এসেছি। পাপমোচনে ও আমরা সবাই যাতে ভালো থাকতে পারি, ব্রহ্মার কাছে সেই প্রার্থনা করেছি।’

এদিকে লাঙ্গলবন্দের স্নানে পুণ্যার্থীদের আসার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ধীরগতিতে চলছে যানবাহন। পুণ্যার্থীদের রাস্তা পারাপার, ইউটার্নে পুণ্যার্থীদের আসা গাড়ি ঘোরানো, গাড়ির চাপের কারণে যানজট হচ্ছে বলে জানিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ।

এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, স্নান উপলক্ষে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ৫০টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনসহ পোশাকে-সাদাপোশাকে ১ হাজার ২০০ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুণ্যার্থীদের আনাগোনার কারণে মহাসড়কে গাড়ির চাপ বেড়েছে, যানজট হচ্ছে। যানজট নিরসনে শতাধিক ট্রাফিক পুলিশ কাজ করছে।