‘মাইয়ারে তো ডেঙ্গুতে খাইছে, এখন গরিবগো চিকিৎসা দিব কে’

ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া চিকিৎসক শরিফা বিনতে আজিজের মা ও ভাইয়ের আহাজারি। শনিবার সকালে ঢাকার দোহার উপজেলার জয়পাড়া চৌধুরীপাড়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

‘আমার মাইয়া ডেঙ্গুরে ভয় পাইত। রাতে মশারি না টানালে আমারে কইত, “মা, আমি আল্লাহ ছাড়া কাউকেই ভয় পাই না। এরপর যদি কোনো কিছুকে ভয় পাই, সেটি হচ্ছে ডেঙ্গু।” আমার মাইয়ারে তো ডেঙ্গুতে খাইছে, এখন গরিব মানুষগো চিকিৎসা দিব কে?’

শনিবার কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন ঢাকার দোহার উপজেলার জয়পাড়া চৌধুরীপাড়া এলাকার আবদুল আজিজের স্ত্রী এবং ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া চিকিৎসক শরিফা বিনতে আজিজের মা মর্জিনা বেগম। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল শুক্রবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়।

আরও পড়ুন

শরিফার বাড়ি দোহারের জয়পাড়া চৌধুরীপাড়া গ্রামে। বাবা আবদুল আজিজ জয়পাড়া লটাখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। দুই ভাই-বোনের মধ্যে শরিফা ছিলেন বড়। ছোট ভাই ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

শরিফার ইচ্ছা ছিল, চিকিৎসক হয়ে গ্রামের গরিব মানুষের সেবা করার। মাকেও বিভিন্ন সময় সেই কথা বলতেন। শরিফার মা মর্জিনা বেগম বলেন, ‘আমার মাইয়া শরিফা সব সময় আমারে কইত, “মা আমি গ্রামে থাইক্যা গরিব-দুঃখী মানুষের চিকিৎসা করুম। আমাদের গ্রামের অনেক অসহায় ও দুস্থ মানুষ আছে। তারা টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে পারে না। তুমি তাগো কাছে গিয়া বলবা, আপনাদের ফ্রি চিকিৎসা করানোর জন্য মেয়েকে ডাক্তার বানিয়েছি। আপনাদের শুধু ফ্রি চিকিৎসা না, প্রয়োজনে ওষুধেরও ব্যবস্থা করে দিব।” এখন আমার মাইয়ারে তো ডেঙ্গুতে খাইছে, গরিব মানুষগো চিকিৎসা দিব কে?’ একপর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মর্জিনা।

শরিফা বিনতে আজিজ
ছবি: সংগৃহীত

শরিফাদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসীর ভিড়। সকাল থেকে এলাকার অনেক মানুষ তাঁদের বাড়িতে এসে স্বজনদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন। মাতম চলছে বাড়িজুড়ে।

শরিফার চাচা আজহার আলী ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছোট ভাই আজিজ স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ৩০ বছর ধরে সে শিক্ষকতা করে। ভাইয়ের দুটি রত্ন ছিল। এর মধ্যে ডেঙ্গু এক রত্নকে নিয়ে গেল। শরিফার মৃত্যুর পর আজিজ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। মাঝেমধ্যে অচেতন হয়ে পড়ছে। এখন ভাইকে বাঁচানো মুশকিল হয়ে পড়েছে।’

শরিফার ছোট ভাই ফাহাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আপা ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়তেন। পড়াশোনার কারণে ঢাকায় থাকতেন। ছুটি হলে গ্রামের বাড়িতে আসতেন। ২ আগস্ট বিকেলে আপা বাড়িতে আসেন। ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় আপা মাকে বলেন জ্বর জ্বর লাগছে। সেদিন রাতে আপার ১০৪ ডিগ্রি জ্বর হয়। পরদিন স্থানীয় একটি ক্লিনিকে ডেঙ্গু পরীক্ষা করালে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। পরে আপার অবস্থা খারাপ হলে ৭ আগস্ট রাজধানীর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর অবস্থার অবনতি হলে গত বুধবার রাতে তাঁকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার ভোররাত সাড়ে চারটার দিকে আপা মারা যান।’