ধুনটে মায়ের কোল থেকে চুরি করে বিক্রি করা নবজাতককে উদ্ধার

উদ্ধার করা শিশুটিকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। শনিবার রাতে ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেছবি: প্রথম আলো

বগুড়ার ধুনট উপজেলায় মায়ের কোল থেকে চুরি করে বিক্রি করা নবজাতককে প্রায় ২ মাস ২০ দিন পর উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় শিশুটিকে উদ্ধার করে ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করা হয়ে। পরে শিশুটিকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। গত ২৮ নভেম্বর বেলা ৩টার দিকে উপজেলার একটি ক্লিনিকে জন্ম হওয়ার পর নবজাতককে চুরি করে বিক্রির ঘটনা ঘটেছিল।

সন্তান ফিরে পাওয়া ওই নারীর নাম আয়শা আকতার। তিনি উপজেলার বেলকুচি গ্রামের সোহেল রানার স্ত্রী।

ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈকত হাসান বলেন, নবজাতকটি চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলার পর অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে। মামলার অভিযোগে অনেক অসংগতি আছে। এ কারণে শিশুটিকে কোথায় থেকে এবং কার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, তা তদন্তের স্বার্থে এখন বলা যাচ্ছে না।

পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, সোহেল রানার সঙ্গে আয়শা আকতারের দেড় বছর আগে বিয়ে হয়। বিয়ের পর সোহেল রানা জীবিকার তাগিদে ঢাকায় অবস্থান করেন। আর তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আয়শা আকতার বেলকুচি গ্রামে তাঁর নানি আছিয়া খাতুনের বাড়িতে থাকেন। গত বছরের ২৮ নভেম্বর বেলা ৩টার দিকে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ও তাঁর লোকজন আয়শাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাঁর নানির বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যান। পরে তাঁরা আয়শাকে শেরপুর উপজেলা সদরের খেজুরতলা এলাকায় মাহবুব ক্লিনিকে ভর্তি করান। সেখানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আয়শা পুত্রসন্তান জন্ম দেন। আয়শা অচেতন থাকা অবস্থায় তাঁর কোল থেকে নবজাতককে চুরি করে বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম ও তাঁর সহযোগীরা অন্যের কাছে বিক্রি করে দেন।

এ ঘটনায় ১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে আয়শা আকতার বাদী হয়ে তাঁর সন্তান চুরি করে বিক্রির অভিযোগে ধুনট উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামসহ তাঁর চার সহযোগীর বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা করেন। মামলার আসামি বিএনপির নেতা রফিকুল ইসলামসহ অন্যরা বেলকুচি গ্রামের বাসিন্দা।

অভিযোগের বিষয়ে বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, আয়েশার কোনো অভিভাবক নাই। তাই তাঁকে ক্লিনিকে ভর্তির জন্য সহযোগিতা করেছেন। তাঁর সন্তান কারা বিক্রি করেছেন, তা তাঁর জানা নেই। তবে এখন জানতে পেরেছেন, আয়শা আকতার তাঁর সন্তানকে আইনগতভাবেই একজনকে দত্তক দিয়েছিলেন। বসতবাড়ির জমিজমা বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষ তাঁকে (আয়শাকে) দিয়ে মিথ্যা মামলা করিয়েছে।

মামলার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় শিশুটিকে উদ্ধার করে। পরে মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাসান আহম্মেদ ও ধুনট সদর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ রানার উপস্থিতিতে শিশুটিকে ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাঁর মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছে পুলিশ।

এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান হাসান আহম্মেদ বলেন, তাঁর জানা মতে, মায়ের ইচ্ছাতেই আদালতের মাধ্যমে নবজাতকে দত্তক দেওয়া হয়েছিল। এখন সেই সন্তান ফিরে পেতে মামলা করেছেন ওই নারী। এ কারণে শিশুটিকে উদ্ধার করে মায়ের কাছে ফিরে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে আয়শা আকতার প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিবেশী নানা রফিকুল ইসলামের মাধ্যমে ক্লিনিকে ভর্তি হই। সেখানে সিজারের মাধ্যমে পুত্রসন্তান জন্ম হয়। জ্ঞান ফেরার পর থেকে আমার সন্তানকে খুঁজতে থাকি। এখন আমি আমার সন্তান ফিরে পেয়েছি।’