হাজার কোটি টাকা খরচের পরও চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা কেন, ক্ষুব্ধ স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর প্রশ্ন

চট্টগ্রামে তিন সংস্থার সমন্বয় সভায় বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। গতকাল বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে
ছবি: প্রথম আলো

জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশনের একটি, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) দুটি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) একটি প্রকল্পের আওতায় ১১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকার কাজ চলছে।

গত ৬ বছরে ৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পরও সুফল পাচ্ছেন না নগরবাসী। এ বছর অন্তত ১২ বার তলিয়ে যায় নগর। বিষয়টি নিয়ে নগরবাসীর হতাশার শেষ নেই। এবার এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।

গতকাল শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে তিন সংস্থার উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে নিজের অসন্তুষ্টি ও ক্ষোভের কথা জানান। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও স্থানীর সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

‘জলাবদ্ধতা নিরসনে কী কাজ হয়েছে, তার আউটপুট চাই। শুধু মিটিং আর রেজল্যুশনের কথা শুনতে চাই না। এগুলো শুনতে শুনতে আমি বিরক্ত।’
মো. তাজুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী

সভায় কেবল জলাবদ্ধতা নয়, ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেও সিটি করপোরেশন ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্ত্রী মন্তব্য করেন। সিটি করপোরেশন আয়োজিত এই সমন্বয় সভায় সভাপতিত্ব করেন মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহম্মদ ইবরাহিমসহ তিন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে মো. তাজুল ইসলাম বলেন, হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পরও চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এত টাকা ব্যয় করার পরও কেন জলাবদ্ধতা হবে, জানতে চান তিনি। পাশাপাশি হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, বিষয়টি তাঁকে যন্ত্রণা দেয়। বারবার দগ্ধ করে।

গতকালের বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করে মন্ত্রী বিগত দিনে বিভিন্ন সভার বাস্তবায়ন বিষয়ে জানতে চান। সিটি করপোরেশনসহ তিন সংস্থার প্রতিনিধিদের কাছে তিনি জানতে চান, জলাবদ্ধতা নিয়ে অতীতে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি কতটুকু হয়েছে? এরপর সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের দুই কর্মকর্তা সে বিষয়ে তাঁকে অবহিত করেন। তাঁদের বক্তব্যের একপর্যায়ে মন্ত্রী বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে কী কাজ হয়েছে, তার আউটপুট চাই। শুধু মিটিং আর রেজল্যুশনের কথা শুনতে চাই না। এগুলো শুনতে শুনতে আমি বিরক্ত।’

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম
(ফাইল ছবি)

সভার একপর্যায়ে চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিয়ে কোনো ধরনের সমীক্ষা বা স্টাডি আছে কি না, সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের কাছে জানতে চান মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম উত্তরে তাঁকে বলেন, ওয়াসার একটি মহাপরিকল্পনা রয়েছে। আর ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, ওয়াসার মহাপরিকল্পনার ভিত্তিতে সিডিএ একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হলে জলাবদ্ধতা দূর হবে।

এ সময় রফিকুল ইসলাম বলেন, মহাপরিকল্পনায় ৫৭টি খাল থাকলেও সিডিএ কাজ করছে ৩৬টি নিয়ে। বাকি ২১টি নিয়ে সিটি করপোরেশন প্রকল্প নিচ্ছে।

সভার বিশেষ অতিথি শিক্ষা উপমন্ত্রী ও সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, সিটি করপোরেশন আগে খালগুলো নিজেরাই রক্ষণাবেক্ষণ করত। নিজস্ব অর্থ ও জনবল দিয়ে খালগুলো নিয়মিত খনন করা হতো। আগে এভাবেই কাজ করা হতো। তখন কোনো প্রকল্প নেওয়া হতো না। তিনি বলেন, এখন সবাই প্রকল্পপ্রিয় হয়ে গেছেন। তাঁদের মনোভাব এমন যে প্রকল্প ছাড়া কাজ হবে না। নিজস্ব আয় দিয়েও করা যেতে পারে।

তবে সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী দাবি করেন, সিটি করপোরেশনের রাজস্ব দিয়ে খাল খননের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়নি। চাক্তাই খালের তলা পাকাকরণসহ খাল খননের সব কাজ করা হয়েছে প্রকল্পের মাধ্যমে। আর শুধু রাজস্ব দিয়ে নালা-নর্দমা খননের কাজ করা হয়েছে।

সভায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এডিস মশা নিয়ে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম নেই। করপোরেশনের তৎপরতা কী? সিটি করপোরেশন ঠিকভাবে কাজ করছে না বলে তাঁর কাছে অভিযোগ রয়েছে। এখনই যদি সতর্ক না হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। শুধু মশা মেরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।

অবশ্য সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরেন।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী উদ্যানে দোকান স্থাপনের অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, উদ্যানে কোনো ধরনের দোকান বসানো যাবে না। ইচ্ছেমতো কোনো কিছু করা যাবে না। কিছু করতে চাইলে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হবে।