প্রসূতিদের ভরসা পটিয়ার পাঁচুরিয়া মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র

চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার পাঁচুরিয়া মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র।ছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রামের পটিয়ার কোলাগাঁও ইউনিয়নের গৃহবধূ কামরুন নাহারের (২৪) প্রসব বেদনা শুরু হলে তাঁর মা শহরবানু একটি অটোরিকশা ভাড়া করেন। মেয়েকে নিয়ে যান পাশের ইউনিয়ন হাবিলাস দ্বীপের পাঁচুরিয়া মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে। শহরবানু বলেন, চার বছর আগে পাঁচুরিয়া মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে প্রথম সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন কামরুন নাহার। তখন অটোরিকশার ভাড়া ছাড়া কোনো খরচ হয়নি। প্রসবের জন্য কোনো ফি নেয়নি, বরং মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র থেকেই দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় ওষুধ। তাই এবারও সন্তান প্রসবের আগমুহূর্তে মেয়েকে কোনো ধরনের সংশয় ছাড়াই ভর্তি করিয়েছেন পাঁচুরিয়া মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে।

বিনা খরচে ভালো সেবা এবং বিনা মূল্যে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করায় কামরুন নাহারের মতো চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা ও এর আশপাশের প্রসূতিদের সন্তান প্রসবের জন্য ভরসার স্থান হয়ে উঠেছে পাঁচুরিয়া মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র। কেন্দ্রটি ১৯৫৭ সালে স্থানীয় বাসিন্দা অশ্বিনী রঞ্জন বড়ুয়ার দান করা জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি পরিচালনা করে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ।

কেন্দ্রটিতে প্রতিবছর স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের সংখ্যা বেড়ে চলছে। গত ১ জানুয়ারি থেকে ২০ মে পর্যন্ত ৩৬৭ জন প্রসূতি সন্তান প্রসব করেছেন। ২০২৩ সালে সন্তান প্রসব হয়েছে ১ হাজার ৫৮টি। এর আগে ২০২২ সালে ৯৩৪ জন, ২০২১ সালে ৮৮৭ জন এবং ২০২০ সালে ৭১৩ জন প্রসূতি কেন্দ্রে সন্তান প্রসব করেন। প্রসব ছাড়াও পাঁচুরিয়া মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ১০০ জন মা ও শিশু সেবা নেন।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পটিয়া ছাড়াও বাঁশখালী, কর্ণফুলী ও বোয়ালখালী উপজেলা থেকেও প্রসূতি সেবার জন্য কয়েকজন নারী মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটিতে এসেছেন। বোয়ালখালী উপজেলা থেকে স্ত্রী জেরিন আকতারকে নিয়ে আসা মো. খালেদ নামের এক ব্যক্তি বলেন, তাঁর স্ত্রী প্রথম সন্তানের জন্ম দিয়েছেন নগরের একটি হাসপাতালে। স্বাভাবিক প্রসবের পরও ১৪ হাজার টাকা হাসপাতালে দিতে হয়েছে। দু-বছর আগে দ্বিতীয় সন্তান জন্মের সময় স্ত্রীকে পাঁচুরিয়া মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে ভর্তি করেন তিনি। প্রসবের কোনো খরচ ছাড়াই দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হয়েছে। তাই এবারও তিনি স্ত্রীকে পাঁচুরিয়া মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে নিয়ে এসেছেন। কেন্দ্রের সেবা নিয়ে সন্তুষ্ট বলে জানান তিনি।

মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার শিল্পী চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের ১০ জন জনবল থাকার কথা থাকলেও অধিকাংশ পদ শূন্য। এরপরও প্রসূতি নারীদের ২৪ ঘণ্টা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।

পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের চট্টগ্রাম জেলার উপপরিচালক মোহাম্মদ আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, জেলায় থাকা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের মধ্যে পাঁচুরিয়াতেই সবচেয়ে বেশি সন্তান প্রসব হয়। একটি পুরোনো ভবনে সেবা দেওয়া হচ্ছে। রোগীদের ভিড় সব সময় লেগে থাকে। ভবনটি পুনর্নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।