ফরিদপুরে ডেঙ্গু জ্বরে দুই নারীসহ চারজনের মৃত্যু

ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ড। আজ দুপুর সোয়া ১টার দিকে
ছবি: প্রথম আলো

ফরিদপুরে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা থকে আজ শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ফরিদপুরে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ৮২। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ২৪৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ফরিদপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১৬ হাজার ২১৮।

গত ২৪ ঘণ্টায় যে চারজনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁরা সবাই ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তাঁরা হলেন, ফরিদপুরের নগরকান্দার আজাহার মোল্লার ছেলে রাজ্জাক মোল্লা (৭০), রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির গোলাপী (৭০), রাজবাড়ী সদরের বরাট এলাকার তারাকান্দা গ্রামের হাবিবুর (৫০) এবং মাগুরা সদরের চাঁদপুর এলাকার রুপা।

নতুন করে যে ২৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে, এর মধ্যে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৯ জন, ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে ২৮ জন এবং বোয়ালমারীতে ভর্তি হয়েছেন ২৪ জন।

ফরিদপুরে চলতি বছর ১৬ হাজার ২১৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। ফরিদপুরে বিভিন্ন হাসপাতালে বর্তমানে ৭০৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন।

বর্তমানে ফরিদপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৭০৪ জন ভর্তি আছেন। এর মধ্যে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২৯৩ জন। ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৬২ জন। ফরিদপুরের বাইরে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক রোগী ভর্তি রয়েছে বোয়ালমারীতে, ৮১ জন। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চারজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

আজ বেলা একটার দিকে সরেজমিনে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে দেখা গেছে, শয্যার পাশাপাশি মেঝেতে অনেক রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসাধীন নাইম শেখ (২০) বোয়ালমারী কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। নাইমের মা নাসরিন বেগম (৪২) বলেন, ‘ছয়-সাত দিন জ্বরের পর গত বৃহস্পতিবার এই হাসপাতালে টেস্ট করে ডেঙ্গু পজিটিভ হওয়ায় ছেলেকে ভর্তি করেছি। ছেলের চিকিৎসার জন্য পড়ে আছি। জানি না কবে সুস্থ করে বাড়ি নিয়ে যেতে পারব।’

মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন কানাইপুরের কোষাগোপালপুর এলাকার ববিতা বেগম (৩০)। সঙ্গে থাকা তাঁর শাশুড়ি ফরিদা বেগম (৬১) অভিযোগ করেন, একটি সিট খালি থাকতেও তাঁদের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

ফরিদপুরের সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুরে চলতি বছর ১৬ হাজার ২১৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৫ হাজার ৪৩২ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। ফরিদপুরে বিভিন্ন হাসপাতালে বর্তমানে ৭০৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮২ জন। এর মধ্যে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন ৭৭ জন, ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে মারা গেছেন ৩ জন এবং নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ফরিদপুর ডায়াবেটিক সমিতি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন একজন করে।

ফরিদপুরের সিভিল সার্জন মো. ছিদ্দীকুর রহমান বলেন, ‘ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছি। মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। সবার সচেতনতা ছাড়া এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় দেখছি না।’