‘কম্বলটা গাওত দিয়া আইজ শান্তি মোতোন ঘুমাইম’

রংপুরের বদরগঞ্জে আজ বুধবার প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে কম্বল বিতরণ করা হয়। উপজেলার দামোদরপুরের চিকলি ফুটবল খেলার মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

রংপুরের বদরগঞ্জে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে আছেন। স্থানীয় চিকলি নদীর তীরের বাসিন্দারা আরও কাহিল হয়ে পড়েছেন। হিমেল বাতাসে ঠান্ডার তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় গরিব, দুস্থ, অসহায় লোকজন কুঁকড়ে আছেন। তাঁরা খড়কুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। চিকলি নদীপারের ওই শীতার্ত কিছু মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলো ট্রাস্ট। আজ বুধবার ওই নদীর পারের দামোদরপুরের চিকলি ফুটবল খেলার মাঠে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।

চটকুপাড়া গ্রামের ফাতেমা বেগম (৯১) বয়সের ভারে কুঁজো হয়ে গেছেন। দুই নাতিকে সঙ্গে নিয়ে লাঠিতে ভর করে তিনি এসেছেন। কম্বল হাতে পেয়ে কাঁপতে কাঁপতে তিনি বলেন, ‘বেলাটা ওই যে মুন্দিছে আর দেখা যাওচে না। ৯ দিন থাকি ঠান্ডাতে খুব কষ্ট হইছে। কম্বলটা গাওত দিয়া আইজ শান্তি মোতোন ঘুমাইম।’

কম্বল বিতরণের জন্য গতকাল মঙ্গলবার রাতে চিকলি নদীপারের দামোদরপুরের জেলেপাড়া, হাটখোলাপাড়া, বটতলী, চটকুপাড়া, মোস্তফাপুর মণ্ডলপাড়া, বকশীপাড়া ও তুফানুপাড়া গ্রাম ঘুরে গরিব ও অসহায় মানুষের মধ্যে স্লিপ বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া বদরগঞ্জ পৌরসভার রেলওয়ে বস্তি, শাহাপুর, নোয়াখালীপাড়া ও রাধানগরের পাঠানপাড়া গ্রাম ঘুরে একইভাবে দেওয়া হয় স্লিপ। আজ বেলা ১১টার মধ্যে চিকলি ফুটবল খেলার মাঠে উপস্থিত হন ১০৭ জন। তাঁদের হাতে কম্বল তুলে দেন, আমরুলবাড়ি আসমতপাড়া জামে মসজিদের পেশ ইমাম বরকত আলী সরকার ও স্থানীয় আফতাবগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসার সুপার আহাদ আলী সরকার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর বদরগঞ্জ প্রতিনিধি আলতাফ হোসেন। কম্বল বিতরণে সহযোগিতা করেন কলেজশিক্ষার্থী মোস্তাফিজার রহমান, সুজন মাহমুদ, আনোয়ারুল ইসলাম এবং স্থানীয় সাংবাদিক আশরাফুল আলম।

কম্বল পেয়ে হাসি মুখে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন সবাই। আজ বদরগঞ্জ উপজেলার দামোদরপুরের চিকলি ফুটবল খেলার মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

লাঠিতে ভর করে এসেছিলেন চিকলি নদীপারের জেলেপাড়া গ্রামের অসহায় আছিরন নেছা (৮৭)। গায়ে তাঁর পাতলা জরাজীর্ণ শাড়ি। ঠান্ডায় কাঁপছিলেন। বলেন, ‘বাবা, টপ করি মোক কম্বল দেও, গাওত দিয়া বাঁচো।’ কম্বল পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বিড়বিড় করে বলেন, ‘হে আল্লাহ, কম্বল দিয়া মোক জায় (যে) বাঁচাইল, তাক তুই বাঁচাইস।’ কথা বলে জানা গেল, আছিরন নেছার ছয় সন্তানের মধ্যে চারজন মারা গেছেন। স্বামী আবদুর রহমান মারা গেছেন ৪০ বছর আগে। দুই সন্তান নিয়ে অর্থাভাবে সংসার সামলাতে পারেন না। আছিরন থাকেন চিকলি নদীর পারে টাটিবেড়ার ঘরে। নদীর বাতাস বেড়ার ফাঁক দিয়ে ঘরে ঢোকে।

কম্বল হাতে পেয়ে গরুহাটি এলাকার লালমিয়ার (৮০) মুখে দেখা যায় চওড়া হাঁসি। বলেন, ‘এ্যাঙ্কা ঠান্ডা জেবনে কম দেখছি। চেয়ারম্যান–মেম্বারের পাচোত ঘুরিয়াও কম্বল পাওয়া যায় না। তোরা বাড়িত জায়া ডাকেয়া কম্বল দেনেন। দোয়া করোচি, আল্লাহ তোমাকও ডাকে জোন বেহেস্ত দেন।’

পাঠানপাড়া গ্রাম থেকে স্লিপ হাতে এসেছিলেন মোজাম্মেল হক (৭৫)। তাঁর হাতেও কম্বল তুলে দেওয়া হয়। এ সময় মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বাবারা, তোমরা মোর মোতন গরিব মানুষোক খুঁজিয়া বাইর করি যে কম্বলটা দেনেন, সেই জন্যে তোমাক ধন্যবাদ দেওচি। কম্বলটা ঠান্ডাত খুব উপকার করবে।’

স্লিপ না পেয়ে বিতরণস্থলে কম্বল পাওয়ার আশায় প্রায় তিন কিলোমিটার হেঁটে এসেছিলেন ডাঙ্গিরপাড়া গ্রামের মিনতি রায় (৬২)। তাঁকে কম্বল দেওয়া সম্ভব নয়, এ কথা জানানো হলে কান্নাকাটি শুরু করেন। পরে আলাদা করে তাঁর জন্যও একটি কম্বলের ব্যবস্থা করা হয়। কম্বল পাওয়ার পরে তিনি তা গায়ে জড়িয়ে বলেন, ‘ভগবান তোমার ভালো করুক।’

শীতার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন। হিসাব নম্বর: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল, হিসাব নম্বর: ২০৭২০০০০১১১৯৪; ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা। অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন, ০১৭১৩০৬৭৫৭৬ এই পেমেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। বিকাশ অ্যাপে ডোনেশন অপশনের মাধ্যমেও আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন।