জরাজীর্ণ সিলেট পর্যটন মোটেলে আগ্রহ নেই অতিথিদের

সিলেট পর্যটন মোটেল ভবনের পলেস্তারা খসে পড়ছে। গতকাল বুধবার দুপুরে সিলেট শহরতলির বড়শলা এলাকায়ছবি: আনিস মাহমুদ

চায়ের দেশে বেড়াতে আসা পর্যটক-দর্শনার্থীদের জন্য তিন দশক আগে সিলেটের বিমানবন্দর এলাকায় গড়ে তোলা হয় ‘পর্যটন মোটেল’। প্রায় ৪১ একর জমির ওপর বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন নির্মিত মোটেলের সঙ্গেই রেস্তোরাঁ ও উদ্যান। একসময় পর্যটকের ঢল নামা মোটেলটি এখন অতিথি–সংকটে ভুগছে। জরাজীর্ণ কক্ষ, পলেস্তারা খসে পড়াসহ অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে অতিথি হারাচ্ছে। এ ছাড়া মোটেলের পাশেই তারকা মানের হোটেল চালু হওয়ায় পর্যটকেরা সেদিকেই ঝুঁকছেন।

মোটেল কর্তৃপক্ষ বলছে, মোটেলের অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে পর্যটকেরা কম আকৃষ্ট হচ্ছেন। পর্যটন করপোরেশন কক্ষগুলো মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে। কক্ষগুলো নতুন রূপে সাজানোর পরিকল্পনা আছে। ইতিমধ্যে সাতটি কক্ষের সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে।

মোটেল-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালে প্রায় ৪১ একর জমির ওপর ‘সিলেট পর্যটন মোটেল’ নির্মাণ করে পর্যটন করপোরেশন। মোটেলটিতে মোট কক্ষ ২৬টি আছে। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ১৫টি ও সাধারণ কক্ষ ১১টি। এ ছাড়া মোটেলে অনুষ্ঠানের জন্য আছে সেমিনার হল। তবে এখন সেটি অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। কক্ষগুলোর ভাড়া ২ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজর ৫০০ টাকা পর্যন্ত।

গতকাল বুধবার বেলা দুইটার দিকে মোটেলে গিয়ে বিদ্যুৎ পাওয়া যায়নি। মোটেলটির ২৬টি কক্ষের মধ্যে মাত্র ২টি কক্ষে অতিথি অবস্থান করছেন। অতিথি কম থাকায় বিদ্যুৎ না থাকলেও জেনারেটর চালু করা হয়নি। মোটেলের দ্বিতীয় তলায় সেমিনার হলটি ‘স্টোর রুম’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সেখানে ছয়টি শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র খুলে রাখা হয়েছে। ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে জিনিসপত্র। দেয়ালের রং খসে পড়ছে। সভাকক্ষের বেসিন ভাঙা। এর মধ্যে সাতটি কক্ষে আবার সংস্কারকাজ হচ্ছে। কক্ষগুলো নতুন আসবাব দিয়ে সাজানো হবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

মোটেলের নিচতলায় একটি কক্ষ ঘুরে দেখা গেল, তালা ঠিকমতো কাজ করছে না। কক্ষে পাশাপাশি দুটি খাট পেতে রাখা। একটি ড্রেসিং টেবিল, চায়ের টেবিল, অতিথিদের জন্য দুটি কাঠের চেয়ার ও ড্রেসিং টেবিলের সামনে একটি চেয়ার আছে। কক্ষে একটি ফ্যান। দেয়ালের রং নতুন লাগানো মনে হলেও এক পাশে খসে পড়ছে। দেয়ালের সঙ্গে থাকা আলমারির দরজা শীতলপাটি দিয়ে বাঁধা। শীতলপাটির কিছু অংশ পোকামাকড়ে কেটেছে।

পর্যটন মোটেলের সেমিনার হলটি ব্যবহৃত হচ্ছে ‘স্টোর রুম’ হিসেবে। সেখানে রাখা হয়েছে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র। গতকাল বুধবার দুপুরে সিলেট শহরতলির বড়শলা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

মোটেলের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষের অবস্থাও প্রায় একই। তবে সেখানে চেয়ারের বদলে অতিথিদের জন্য সোফার ব্যবস্থা রয়েছে। কিছু কক্ষে ছোট রেফ্রিজারেটরের ব্যবস্থাও আছে। মোটেলের দুজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ২০১৬ সালের দিকে মোটেলে যোগ দেন। প্রথম দিকে ভালো ব্যবসা হতো। তখন মাসে ১৮-১৯ লাখ টাকার ব্যবসা হতো। এখন তা কমে ৭-৮ লাখে নেমেছে। অতিথি হারানোর কারণ জানতে চাইলে বলেন, সময়ের সঙ্গে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে কোনো সুযোগ-সুবিধা চালু না করা ও অবকাঠামোগত সমস্যাই এর মূল কারণ।

সিলেট পর্যটন মোটেলের রেস্তোরাঁয় তেমন একটা অতিথি আসেন না। গতকাল বুধবার দুপুরে সিলেট শহরতলির বড়শলা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

মোটেল লাগোয়া রেস্তোরাঁয় গিয়ে কোনো অতিথি পাওয়া গেল না। রেস্তোরাঁর এক কর্মী প্রথম আলোকে বলেন, আগে প্রতিদিন ৮-১০ হাজার টাকার বেচাকেনা হতো। এখন মোটেলে যে দু-একজন আসেন, তাঁদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। মোটেলের পাশাপাশি রেস্তোরাঁটিরও সংস্কার প্রয়োজন বলে তিনি জানান।

পর্যটন মোটেলের সঙ্গেই বিনোদনকেন্দ্র। সেখানে প্রবেশের জন্য জনপ্রতি ৫০ টাকা টিকিট নিতে হয় দর্শনার্থীদের। বুধবার বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ৭০ দর্শনার্থী টিকিট কেটে প্রবেশ করেছেন বলে জানিয়েছেন টিকিট কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা মো. আবদুল খালিক। তিনি বলেন, প্রতিদিন সাত-আট হাজার টাকার টিকিট বিক্রি করেন। তবে আগে অনেক দর্শনার্থী আসতেন। করোনার আগে দিনে গড়ে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকার টিকিট বিক্রি করতেন তিনি।

সম্প্রতি সিলেট পর্যটন মোটেলের কয়েকটি কক্ষ সংস্কার শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ
ছবি: প্রথম আলো

মোটেলের ব্যবস্থাপক কাজী ওয়াহিদুর রহমান অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে পর্যটক হারানোর কথা স্বীকার করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে কক্ষগুলো মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে পর্যটন করপোরেশন। তবে নতুন করে ভবন বা আলাদা কটেজ নির্মাণের পরিকল্পনা নেই। তিনি বলেন, মোটেলের কক্ষগুলো নতুন রূপে সাজানোর পরিকল্পনা আছে। এর অংশ হিসেবে সাতটি কক্ষের সংস্কারকাজ চলছে। শিগগিরই সেগুলো অতিথিদের জন্য প্রস্তুত হবে।