‘তল্লাশির সময় পুলিশকে মোবাইল দেখাইতে হইছে, এটা কেমন আচরণ?’

যাত্রীবাহী বাস থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি মানুষের মুঠোফোন তল্লাশি করছে পুলিশ। ছবিটি গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে উত্তরার কামারপাড়া মোড় থেকে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

ঘড়ির কাঁটায় সময় শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টা। রাজধানী উত্তরার কামারপাড়া মোড়ে পুলিশের তল্লাশিচৌকি। সড়কের মধ্যে এবং পাশে দাঁড়িয়ে আছেন ২৫ থেকে ৩০ জন পুলিশ সদস্য। সবাই অস্ত্রসজ্জিত। যাত্রীবাহী বাস বা মোটরসাইকেল আসতে দেখলেই দূর থেকে ‘লেজার রশ্মি’ফেলে গতি রোধ করছেন তাঁরা। এরপর গাড়ি থামাতেই চারদিক ঘিরে ধরে শুরু করছেন তল্লাশি।

এর মধ্যেই ফাতেমা পরিবহন নামের একটি বাস এসে থামল তল্লাশিচৌকির সামনে। গাইবান্ধা থেকে ছেড়ে আসা বাসটি যাবে ঢাকার মহাখালীতে। পুরো বাসে ৩০ থেকে ৪০ জন যাত্রী। কেউ ঘুমাচ্ছেন, কেউবা হেডফোন কানে লাগিয়ে গান শুনছেন, কথা বলছেন। এর মধ্যে বাসে উঠে পড়েন ৩ থেকে ৪ জন পুলিশ। ‘নাম কী, যাবেন কোথায়, ব্যাগে কী, পরিচয়পত্র আছে কি না’ ইত্যাদি নানা প্রশ্নে জেরা করতে থাকেন তাঁরা। একপর্যায়ে শুরু করেন মুঠোফোন তল্লাশি। ঢাকার প্রবেশমুখে পুলিশের এমন আচরণে হতবাক সবাই। বিরক্তি বা হতাশা থাকলেও তল্লাশির সময়টুকু বসে রইলেন চুপ করে।

তল্লাশি শেষে পুলিশ বাস থেকে নেমে যাওয়ার পর মো. সেলিম নামের এক যাত্রী বলছিলেন, ‘আমাদের কোনো ব্যক্তিস্বাধীনতা নাই। সাধারণ মোবাইল ফোনটা পর্যন্ত পুলিশের হাত থেকে নিরাপদ না। গাইবান্ধা থেকে আসতে পথে আরও দুইবার তল্লাশি হইছে। প্রতিবারই তাদের (পুলিশ) মোবাইল দেখাইতে হইছে। এটা পুলিশের কেমন আচরণ?’ সেলিমের ভাষ্য, ‘মুঠোফোন মানুষের একান্তই ব্যক্তিগত জিনিস। রাজনীতির বাইরেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা, ছবি বা গোপনীয় জিনিস থাকতে পারে। কিন্তু তল্লাশির নামে পুলিশের মোবাইল দেখাটা খুবই বিব্রতকর এবং একই সঙ্গে অপমানজনক।’

তল্লাশিচৌকি বসিয়ে বাস, মোটরসাইকেলসহ সব ধরনের যানবাহনে তল্লাশি করছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে উত্তরার কামারপাড়া মোড়ে
ছবি: প্রথম আলো

কামারপাড়া মোড়টি রাজধানী ঢাকার আরেকটি প্রবেশদ্বার। গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের একটি শাখা সড়ক এসে যুক্ত হয়েছে এখানে। যে কেউ চাইলে এই সড়ক হয়ে গাজীপুর থেকে ঢাকায় বা ঢাকা থেকে গাজীপুরে যাতায়াত করতে পারবেন। একইভাবে আরেকটি সড়ক গেছে সাভারের আশুলিয়ার দিকে। এই সড়ক ধরেও মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জসহ রাজশাহী বিভাগের মানুষেরা ঢাকায় প্রবেশ করেন।

মোড়টিতে প্রায় আধঘণ্টা অবস্থান করে পুলিশের এমন তল্লাশি কার্যক্রম দেখা যায়। দুই দিক থেকে কোনো মোটরসাইকেল বা যাত্রীবাহী বাস আসতে দেখলেই তারা গতি রোধ করে তল্লাশি করছিলেন। এর মধ্যে কোনো পথচারীর হাতে বড় ব্যাগ দেখলে তাঁকেও তল্লাশি করা হচ্ছিল। যাত্রী-পথচারী সবার ব্যাগই খুলে খুলে তল্লাশি করতে দেখা যায় পুলিশকে।

তল্লাশিচৌকির দায়িত্বে ছিলেন উত্তরা পশ্চিম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়াসিন গাজী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেউ যেন নাশকতার উদ্দেশ্যে কোনো কিছু বহন করতে না পারে সেই উদ্দেশ্যেই চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। আমরা সবাইকেই তল্লাশি করছি।’ যাত্রীদের হয়রানির অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে হয়রানির কিছু নেই। জনগণের নিরাপত্তার জন্যই এ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।’