রাস্তা নদীগর্ভে, দুর্ভোগে ১৫ গ্রামের মানুষ

গ্রামগুলোর মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত ফসল সহজে বাজারজাত করতে পারছেন না।

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলতলা-চিকলীর বাজার রাস্তার একটি অংশ চিকলী নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন এই পথে চলাচলকারী মানুষ
ছবি: প্রথম আলো

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের তেঁতুলতলা থেকে চিকলীর বাজার পর্যন্ত কাঁচা রাস্তাটির প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার। এটি আলমপুর ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের সঙ্গে তারাগঞ্জ-সৈয়দপুর সদরের সংযোগ সড়ক।

বর্ষায় রাস্তাটির ২০০ মিটার অংশের চার ভাগের তিন ভাগ চিকলী নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে গ্রামগুলোর সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত ফসল সহজে বাজারজাত করতে পারছেন না।

স্থানীয় মধুরামপুর গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম (৬৫) বলেন, ‘বাবা, রাস্তা কোনা ভাঙি যায়্যা হামার হইচে দুর্গতি। গ্রামোত কায়ও অসুস্থ হইলে অ্যাম্বুলেন্স ঢোকে না। ধান, পাট, সবজি গাড়িত করি শহর নিগার পাওছি না। গ্রামোতে কম টাকাতে বেঁচপার নাগোছে।’

জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় লোকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সড়কটি দিয়ে আলমপুর ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়, ভেড়াপাড়া, বড়ডাঙ্গাপাড়া, শাইলবাড়ি, দোয়ালীপাড়া, নিঠুপাড়া, মধুরামপুর, পূর্বপাড়া, ভীমপুর, বানিয়াপাড়া, বারোঘরিপাড়া, ধনিপাড়া, চিকলিপাড়া, কুজিপুকুর, শেরমস্ত গ্রামের মানুষ রিকশা, ভ্যান, ট্রাক-ট্রলি ও মাইক্রোবাসে করে যাতায়াত করতেন।

কিন্তু গত জুন মাসে চিকলী নদীর ভাঙনে মধুরামপুর গ্রামের কাছে কাদের মাস্টারের বাড়ির পাশে ২০০ মিটার রাস্তা চার ভাগের তিন ভাগ নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে। এতে গ্রামগুলোর ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

মধুরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুন্নাহার বলেন, রাস্তার ওই ভাঙা অংশে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। মোটরসাইকেল নিয়ে ওই রাস্তা দিয়ে স্কুল আসার সময় গত ২৮ জুলাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক মোতাহার হোসেন নদীতে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন। তাঁর হাত ভেঙে গেছে। এরপর থেকে একটু বৃষ্টি হলেই ভাঙা অংশে পড়ে যাওয়ার ভয়ে ৫০-৫৫ জন শিক্ষার্থীকে স্কুলে পাঠান না অভিভাবকেরা।

সম্প্রতি সরেজমিনে রাস্তাটির নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার চিত্র দেখা গেছে। লোকজন হেঁটে চলাচল করলেও রিকশা-ভ্যান, ট্রাক-ট্রলি, মাইক্রোবাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এক মোটরসাইকেল আরোহীকে এ পথে এসে বিপাকে পড়তে দেখা গেলে।

চিকলীর বাজারে কথা হয় ভীমপুর গ্রামের কৃষক জাহেদুল ইসলামের (৭০) সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই রাস্তার জন্যে মেলা দিন থাকি কষ্ট করুছি। যুদ্ধের পর থাকি যতোবার ভোট হইছে, ততোবার নেতারা কথা দিছে। এই রাস্তা পাকা করি দিবে। কিন্তু পাকা তো দূরের কথা, এখন মাটি দিয়া ভাঙাটায় ঠিক করোছে না। রাস্তা কোনো ঠিক না করায় হামার গ্রামোত বিয়া-শাদির সমস্যা হওছে।’

একই বাজারে আলাপকালে ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের যুবক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রাস্তা কোনার ভাঙা ঠিক কইরবার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ হামরা দুই দিন গেছি। উপজেলা চেয়ারম্যানকেও ফোনোত কছি। তবু কায়ও রাস্তা কোনা ঠিক করেছে না।’

সম্প্রতি রাস্তাটির ছবি তুলতে দেখে এগিয়ে আসেন কুজিপুকুর গ্রামের মশিউর রহমান (৫৫)। আক্ষেপ করে বলেন, ‘ফটো তোলোছেন এটে কী নয়া রাস্তা হইবে? এইকনা রাস্তা ঠিক করার কী কোনো উপায় নাই? রাস্তা না হইলে এবার ভোট দিবার যাইম না।’

আলমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বলেন, ‘রাস্তাটি ঠিক করার মতো অর্থ ইউনিয়ন পরিষদে নেই। তাই বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে জানানো হয়েছে। উপজেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটিতেও এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এমপি মহোদয় আশ্বাস দিয়েছেন।’

সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন, গ্রামবাসী রাস্তা নিয়ে সমস্যার কথা বলেছেন। কয়েক দিন আগে তিনি গিয়ে রাস্তার ভাঙা অংশ পরিদর্শন করে এসেছেন। কীভাবে সমস্যা সমাধান করা যায়, তার পরিকল্পনা চলছে।