হঠাৎ বন্যায় সুরক্ষা দেবে যে ঘর
বাইরে থেকে দেখতে ঘরটা সাধারণ মানের দোচালা। তবে ভেতরে ঢুকলে দেখতে একটু অন্য রকম। দোতলা বাড়ির আদল। নিচতলা থেকে ওপরের তলায় যাওয়ার জন্য আছে বাঁশের মই। এই ঘর বানাতে ব্যবহার করা হয়েছে বাঁশ, মাটি ও ছাই দিয়ে তৈরি টিন ও সিমেন্টের মতো সহজলভ্য সব উপাদান। আকস্মিক বন্যায় মানুষকে সুরক্ষা দিতে একদল তরুণ স্থপতি এই ঘরের নকশা করেছেন।
সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার রাজাগঞ্জ ইউনিয়নের লামাপাড়া গ্রামে এমন ঘর বানানোর কাজ চলছে। যার ঘর বানানো হচ্ছে, তাঁর নাম আখলাছ মিয়া (৩৭)। বাড়ি তৈরির বিষয়ে মিস্ত্রিদের নানা নির্দেশনা দিচ্ছিলেন তরুণ স্থপতি দলের সদস্যরা।
কাজের ফাঁকে কথা হয় আখলাছ মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, গত জুন মাসের মাঝামাঝি বন্যায় তাঁর ঘরে কোমর সমান পানি ওঠে। এতে তাঁর ঘরটি ধসে পড়ে। স্ত্রী–সন্তানসহ তাঁর ছয়জনের পরিবারকে আশ্রয় নিতে হয় প্রতিবেশীর বাড়িতে। এখন তাঁর ঘর বানিয়ে দিচ্ছে তরুণ স্থপতিদের একটি দল। তাদের আর্থিক সহযোগিতা করছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
বন্যার কয়েক দিন দোচালা ঘরে আশ্রয়ের পাশাপাশি ঘরের অন্যান্য উপকরণও সুরক্ষিত থাকবে। যেসব এলাকায় হঠাৎ বন্যা দেখা দেয়, সেসব এলাকার জন্য এই ঘরগুলো বেশ উপযোগী।
স্থপতিদের দলে আছেন পাঁচজন। তাঁরা হলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক তিন শিক্ষার্থী আহমেদ ফারিয়া, অর্ণব নূর ও জিয়াউর রহমান এবং সিলেটের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী মিনহাজুল আবেদিন চৌধুরী ও কল্লোল চন্দ।
এই দলের সদস্য মিনহাজুল আবেদিন চৌধুরী বলেন, যাঁরা নদী বা হাওরের পাড়ে থাকেন, আকস্মিক বন্যায় তাঁরা শুরুতে প্লাবিত হন। নিজেদের আশ্রয়ের পাশাপাশি ঘরে থাকা সামগ্রী নিরাপদে রাখার দুশ্চিন্তা তাদের ঘিরে ধরে। তাঁর নিজের গ্রামের বাড়ি বন্যাপ্রবণ এলাকায় হওয়ায় তিনি স্থাপত্যবিদ্যা কাজে লাগিয়ে উদ্যোগটি নেন। আরও কয়েকজন মিলে কাজটি এগিয়ে নিচ্ছেন।
স্থপতিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সহজলভ্য নির্মাণসামগ্রী দিয়ে কীভাবে বন্যার পানি বা জলমগ্ন স্থানে ঘর টিকিয়ে রাখা যায়, এমনটি চিন্তা করছিলেন তাঁরা। খরচও যেন কম হয়, সেটিও ভেবেছেন তাঁরা। প্রথম ধাপে তাঁরা গোয়াইনঘাটের দৌবাড়ি ইউনিয়নের হাতিরকান্দি গ্রামে তাঁরা একটি ঘর নির্মাণ করেন। ২৪ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১২ ফুট প্রস্থের ঘরটির উচ্চতা ছিল ১৮ ফুট। পাঁচজন শ্রমিক দিয়ে সাত দিনে ঘরটি বানাতে খরচ হয় প্রায় ৯০ হাজার টাকা।
কীভাবে এমন ঘর বানানোর ভাবনা তাঁদের মাথায় এল, জানতে চাইলে স্থপতিরা বলেন, গ্রামের উঁচু দোচালা ঘর দেখে তাঁরা এমন ঘর তৈরির চিন্তা করেন। আগের দোচালা ঘরগুলোর উচ্চতা ১৬ ফুটের মতো। সেই ঘরের চালায় ব্যবহৃত হয় বাঁশ–বেতের তৈরি চাটাই। ঘরের নিচের অংশে আট ফুট থাকলেও ওপরের আট ফুট অব্যবহৃত থাকে। অব্যবহৃত সেই অংশই আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহারের চিন্তা ছিল তাঁদের। সেই চিন্তাকে তাঁরা বাস্তবে রূপ দিয়েছেন।
এই ঘরের বিষয়ে স্থপতি ও নগর–পরিকল্পনাবিদ জেরিনা হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তরুণ স্থপতিদের প্রকল্পটির ব্যাপারে তিনি শুনেছেন। সহজলভ্য উপাদান দিয়ে কম খরচে ঘরটি বানানো যায়। আকস্মিক বন্যা বেশি দিন স্থায়ী হয় না। বন্যার কয়েক দিন দোচালা ঘরে আশ্রয়ের পাশাপাশি ঘরের অন্যান্য উপকরণও সুরক্ষিত থাকবে। যেসব এলাকায় হঠাৎ বন্যা দেখা দেয়, সেসব এলাকার জন্য এই ঘরগুলো বেশ উপযোগী।