মেঝেতে নারীর নিথর দেহ, ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছিল সাবেক স্বামীর লাশ

ঝুলন্ত লাশ
প্রতীকী ছবি

সাভারের আশুলিয়ার কাইচাবাড়ি এলাকার দুইতলা ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে প্রায় দুই মাস ধরে বসবাস করছেন মিম আক্তার ও নাতাশা আক্তার। আজ দুপুরে মিমের সঙ্গে দেখা করতে আসেন তাঁর সাবেক স্বামী মো. নাঈম। এ সময় উভয়ের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে মিমকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেন নাঈম। পরে নিজেও ওই কক্ষের ফ্যানের সঙ্গে রশি দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এমনটাই দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

নিহত মিম আক্তার (২২) নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার খোকশাবাড়ী গ্রামের মোংলা সরকারের মেয়ে। তিনি কাইছাবাড়ি এলাকায় তৈরি পোশাকের একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। মো. নাঈম নাটোর জেলার মকিমপুর এলাকার জালাল উদ্দীনের ছেলে।

নাতাশা ও স্থানীয় লোকজন জানান, দুই মাস আগে মিম আক্তার কাইছাবাড়ি এলাকায় গফুর মন্ডলের বাসার দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষ ভাড়া নেন। ওই কক্ষটিতে মিম ও নাতাশা একসঙ্গে থাকতেন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে কারখানায় মধ্যাহ্নভোজের বিরতির সময় বাসায় আসেন মিম। এ সময় তাঁর সাবেক স্বামী নাঈম ওই বাসায় উপস্থিত হন। তিনি নাতাশাকে কক্ষের বাইরে যাওয়ার অনুরোধ করলে নাতাশা অস্বীকৃতি জানান। পরে জোর করেই নাতাশাকে কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয়।

নাতাশা কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে মিম ও নাঈমকে ঝগড়া করতে দেখেন। নাতাশাকে দেখতে পেয়ে একপর্যায়ে নাঈম উত্তেজিত হয়ে তাঁকে ছুরি দিয়ে আঘাত করতে যান। নাতাশা দৌড়ে সেখান থেকে নিচে নেমে এসে চিৎকার শুরু করেন। কিছু সময় পর স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দাসহ নাতাশা ওই কক্ষের সামনে যান। পরে তাঁরা কক্ষের সামনে গিয়ে মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় মিমকে পড়ে থাকতে দেখেন। এ ছাড়া ফ্যানের সঙ্গে গলায় রশি দিয়ে নাঈমকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। পরে তাঁরা আশুলিয়া থানা–পুলিশকে খবর দেন।

খবর পেয়ে আশুলিয়া থানা–পুলিশ লাশের সুরতহাল করে। এরপর সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। রাত সাড়ে আটটার দিকে লাশ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

নাতাশা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ও মিম একসঙ্গেই কক্ষটিতে থাকি। অসুস্থ থাকায় আমি বাসায়ই ছিলাম। দুপুরে মিম খাবার খেতে বাসায় আসে। তাঁর সাবেক স্বামী নাঈম আমাকে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে বলে। চাকু দিয়ে মারতে এলে আমি দৌড়ে নিচে গিয়ে সবাইকে ডাকাডাকি করি। ভয়ে নিচে একটা ঘরে লুকিয়ে ছিলাম। সবাই ওপরে গিয়ে ভেতর থেকে দরজা আটকানো দেখে। পরে দরজা খুলে দুজনের লাশ দেখে।’

নিহত নারীর ভাই মো. খোরশেদ আলম জানান, তিন বছর আগে নাঈমের সঙ্গে মিমের বিয়ে হয়েছিল। দেড় বছর হয় ডিভোর্স হয়ে গেছে। সাত দিন আগে নাঈমের বাবা মারা যাওয়ার পর তিনি আবারও মিমকে নিয়ে সংসার করতে চান। তাঁকে বলা হয়েছিল ঈদের পর বাড়িতে সবাইকে নিয়ে বসে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থল থেকে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরিটি উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহ দুটির সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)-৪ সিপিসি-২–এর কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট রাকিব মাহমুদ খান প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ওই নারীকে ছুরিকাঘাতে হত্যার পর ওই ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন। অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে র‍্যাবও বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে। তদন্ত শেষে হত্যার সুনির্দিষ্ট কারণ এবং এর সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত রয়েছেন কি না, সেটি নিশ্চিত হওয়া যাবে।