ধর্ষণ মামলা আপসের চেষ্টা, সাবেক ইউপি সদস্যসহ দুজনের পাঁচ ঘণ্টা হাজতবাস

ভ্রাম্যমাণ আদালতপ্রতীকী ছবি

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় ধর্ষণ মামলার বাদীকে চাপ দিয়ে আপস করানোর অভিযোগে পাঁচ ঘণ্টা হাজত খেটেছেন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক এক সদস্যসহ দুজন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নালিতাবাড়ী জিআর আমলি আদালতে এ ঘটনা ঘটে।

হাজতবাস করা দুই ব্যক্তি হলেন নালিতাবাড়ী উপজেলার মরিচপুরান ইউপির সাবেক সদস্য ফজলুর রহমান (৪৫) ও একই ইউনিয়নের বাসিন্দা বাবুল আক্তার (৪৮)।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় নালিতাবাড়ী উপজেলার একটি গ্রামে দরিদ্র পরিবারের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীকে (১২) বসতবাড়িতে একা পেয়ে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে তারা মিয়া (৩৫) নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে নালিতাবাড়ী থানায় মামলা করেন। পরে পুলিশ তারা মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। ভুক্তভোগী কিশোরী ফৌজাদারি কার্যবিধির ২২ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেয়। বর্তমানে মামলার আসামি তারা মিয়া জেলা কারাগারে বন্দী।

এদিকে ৪ এপ্রিল জেলা ও দায়রা জজ আদালতে তারা মিয়ার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর হয়। এরপর সাবেক ইউপি সদস্য ফজলুর রহমান ও সমাজপতি বাবুল আক্তার আসামির পক্ষ নিয়ে বাদীপক্ষকে চাপ দিয়ে ধর্ষণ মামলাটির আপস-মীমাংসা করে অ্যাফিডেভিট আদায় করেন। একপর্যায়ে আজ দুপুরে ওই দুই ব্যক্তি নিম্ন আদালতে বাদীকে দাঁড় করিয়ে তারা মিয়ার জামিন আবেদনের ব্যবস্থা করেন। আদালতের বিচারক জামিন নাকচ করে বাদীর কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত শোনেন ও জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় ওই দুই ব্যক্তি আদালতের কাছে তাঁদের কৃতকর্মের কথা স্বীকার করেন।

এরপর আদালতের নির্দেশে দুজনকে আদালতের হাজতখানায় নিয়ে আটক রাখা হয়। পরে আইনজীবীর মাধ্যমে তাঁরা দায় স্বীকার ও ক্ষমা প্রার্থনা করে অ্যাফিডেভিট দাখিল করলে বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নূর-ই-জাহিদ মুচলেকা গ্রহণ সাপেক্ষে দুজনকে মুক্তির আদেশ দেন। আদালত পুলিশের উপপরিদর্শক (সিএসআই) মো. আলাউদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ধর্ষণ মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। তাই এ ধরনের মামলা কোনোভাবেই আপসযোগ্য নয়। আদালত আপসের চেষ্টাকারী দুই ব্যক্তিকে পাঁচ ঘণ্টা হাজতবাসের আদেশ দিয়ে ন্যায়বিচারের পথকে সুগম করেছেন। এটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এর ফলে পরবর্তী সময়ে কোনো ব্যক্তি এ ধরনের স্পর্শকাতর মামলার আপসের অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকবেন বলে মনে করেন তিনি।