পঞ্চগড়ে চায়ের পর কফি চাষের সম্ভাবনা

সুপারি, আমবাগানসহ বিভিন্ন বাগানের ছায়াযুক্ত ফাঁকা স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে ৭৪টি প্রদর্শনী কফিবাগান।

কফিগাছের ফল পাকতে শুরু করেছে। সেগুলো পরখ করে দেখছেন এক কৃষক। গত মঙ্গলবার পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের বিশমনি এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

বাড়িসংলগ্ন এক বিঘার সুপারিবাগানে প্রায় দুই বছর আগে ১৩৫টি কফির চারা লাগিয়েছেন কৃষক আবদুল হালিম প্রধান। সম্প্রতি এসব গাছে ধরেছে কফির ফল। ইতিমধ্যে সেগুলো পাকতে শুরু করেছে। অল্প পরিশ্রমে সাথি ফসল হিসেবে কফি চাষে লাভের আশায় আছেন আবদুল হালিম।

আবদুল হালিমের বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের বিশমনি এলাকায়। আবদুল হালিমের মতো প্রায় অর্ধশত কৃষক এ জেলায় কফি চাষ করেছেন। কৃষি বিভাগের কফি ও কাজুবাদাম গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় পঞ্চগড়ে তিনটি উপজেলায় ৭৪টি প্রদর্শনী কফিবাগান করেছেন তাঁরা। পাহাড়ি ফসল কফি সমতল ভূমিতে উৎপাদন করছেন তাঁরা।

পঞ্চগড় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের শেষের দিকে কৃষি বিভাগের কফি ও কাজুবাদাম গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় সদর, তেঁতুলিয়া ও আটোয়ারী উপজেলায়  রোবাস্টা জাতের কফি চাষ শুরু হয়েছে।

জেলার মাটি ও আবহাওয়া কফি চাষের জন্য উপযোগী। সুপারি, আমবাগানসহ বিভিন্ন বাগানের ছায়াযুক্ত ফাঁকা স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে ৭৪টি প্রদর্শনী কফিবাগান। ৪৭ জন কৃষক ১২ দশমিক ২৬ হেক্টর জমিতে এসব কফিবাগান গড়ে তুলেছেন। এরই মধ্যে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিভিন্ন বাগান থেকে কফি সংগ্রহ (হারভেস্ট) শুরু হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় চাষিদের কফির চারা, কারিগরি সহায়তাসহ নানা পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।

চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কৃষি বিভাগ থেকে কফি চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি চারা, সারসহ বিভিন্ন উপকরণ বিনা মূল্যে সরবরাহ করা হয়েছে। কফির চারা রোপণের দুই থেকে আড়াই বছরের মধ্যে ফল আসা শুরু হয়েছে। একেকটা কফিগাছ অন্তত ৫০ বছর ফল দিতে পারে বলে জেনেছেন তাঁরা। প্রতি বিঘা বাগানে সেচ, সার, কীটনাশকসহ বছরে ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ হবে। আর বছরে অন্তত তিনবার কফি সংগ্রহ করা যাবে। পর্যাপ্ত কফির ফলন হলে প্রতিবছর প্রতি বিঘার বাগান থেকে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকার কফি বিক্রির আশা করছেন চাষিরা। তবে প্রথমবারের মতো উৎপাদন শুরু হওয়ায় এসব কফি প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাত করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন চাষিরা। তবে উৎপাদিত কফি প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতে কৃষি বিভাগ থেকে সহায়তা করা হবে।

ধাক্কামারা এলাকার কফিচাষি মো. মোনায়েম বলেন, কফি ছায়াযুক্ত স্থানে চাষ করতে হয়। তিনি দুই বিঘা জমির আমবাগানে কফি চাষ করেছেন। এতে শেড ট্রি (ছায়াবৃক্ষ) হিসেবে কাজ করছে আমগাছ। ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে লাগানো কফিগাছে এবার পর্যাপ্ত ফল ধরেছে। ইতিমধ্যে কিছু ফল সংগ্রহ করেছেন। কৃষি বিভাগ থেকে এসব কফি প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতের বিষয়ে সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক শাহ আলম মিয়া বলেন, কফি চাষের জন্য ছায়াযুক্ত স্থানের প্রয়োজন। কফি পরিচর্যার জন্য বাড়তি খরচ নেই। তিন উপজেলার মধ্যে সদরে স্বল্প পরিসরে কফি সংগ্রহ শুরু হয়েছে। জেলায় একটি প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র স্থাপনের সম্ভাবনা রয়েছে। কফি সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতের ক্ষেত্রে কৃষকদের সহযোগিতা করা হবে। এ জেলার আবহাওয়া কফি চাষে অনুকূল হওয়ায় কৃষকেরা লাভবান হবেন।