ভোটের আগে কথার লড়াই

আধিপত্য বিস্তারসহ নানা কারণে বিভক্ত কুমারখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ। প্রার্থীরা একে অপরকে ছাড় দিতে নারাজ।

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে প্রচার-প্রচারণা জমে উঠেছে। চেয়ারম্যান পদে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগের দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী নানা নির্বাচনী সভায় এক অপরকে বিষোদ্‌গার করে যাচ্ছেন। কথার তুমুল লড়াই চলছে দুই প্রার্থীর নেতা-কর্মীদের মধ্যেও।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দলীয় কোন্দল, পদপদবি, হাট–ঘাট দখল, আধিপত্য বিস্তারসহ নানা কারণে বিভক্ত কুমারখালী আওয়ামী লীগ। তাই প্রার্থীরা একে অপরকে ছাড় দিতে নারাজ। দ্বিতীয় ধাপে ২১ মে অনুষ্ঠিত হবে কুমারখালী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এতে চেয়ারম্যান পদে আনারস প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবদুল মান্নান খান। তিনি টানা দুবারের উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুর রউফ তাঁকে গোপনে সমর্থন করছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। তাঁর পক্ষে প্রকাশ্যে কাজ করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাহিদ হোসেন ও আওয়ামী লীগের একাংশ।

আরেক প্রার্থী মোটরসাইকেল প্রতীকের মো. গোলাম জিলানী ওরফে পিটার। তাঁর দাদা বঙ্গবন্ধুর সহচর গোলাম কিবরিয়া সংসদ সদস্য ছিলেন। তাঁর মা বেগম সুলতানাও সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। চাচাতো ভাই যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ। জিলানীকে সমর্থন দিচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র চাচা সামছুজ্জামান এবং আওয়ামী লীগের একাংশ।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পোস্টার, ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে পুরো উপজেলা। তবে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ভোট নিয়ে তেমন কোনো মাতামাতি নেই। ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার ব্যাপারেও মুখ খুলছেন না অনেকেই। কয়েকজন বলেন, সামনের কয়েক দিনে প্রার্থীরা ভোটারদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত ভোট উৎসবের আমেজ ফেরাতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে তাঁদের। তবে দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা নিজেদের শক্তি প্রদর্শনে প্রতিদিনই মোটরসাইকেল মহড়া ও মিছিল বের করছেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলছেন, দলের কেন্দ্র থেকে নির্বাচনের মাঠ উন্মুক্ত করা হয়েছে। এবার নেই দলীয় প্রতীকও। একাধিক শক্ত প্রার্থী থাকায় প্রতিদিনই চলছে নির্বাচনী মতবিনিময়, পথসভা ও প্রচার-প্রচারণা। ভোটারদের সমর্থন পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন প্রার্থীরা। আর প্রার্থীদের পক্ষে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তাঁদের কর্মী-সমর্থকেরা। বিজয় সুনিশ্চিত করতে কেউ কাউকে ছাড় দিয়ে কথা বলছেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আবদুল মান্নান খানের কয়েকজন কর্মী বলেন, এর আগেও দুবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আবদুল মান্নান খান। তাঁর ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এই উপজেলার তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগের কর্মী–সমর্থকদের বড় অংশ রয়েছে তাঁর সঙ্গে। সব মিলিয়ে মান্নান খানের মতো জননন্দিত নেতাকে ধরাশায়ী করার মতো জনসমর্থিত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর নেই।

অন্যদিকে গোলাম জিলানীর নির্বাচনী কর্মী–সমর্থকেরা বলেন, সাধারণ ভোটাররা পরিবর্তন চায়। তৃণমূল পর্যায়ে পারিবারিক রাজনৈতিক ঐতিহ্যের কারণে পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধিসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও পারিবারিক সদস্যরা দিন–রাত জিলানীর বিজয় নিশ্চিত করতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৩ সালে আবদুল মান্নান খানকে সভাপতি ও সামছুজ্জামানকে সাধারণ সম্পাদক করে তিন বছর মেয়াদি উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু নানা কারণে তিন বছরের কমিটি গড়িয়েছে ১১ বছরে। ফলে দ্বিধাদ্বন্দ্বে বিভক্ত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। আবদুল মান্নান খান আর সামছুজ্জামানের দ্বন্দ্ব তুঙ্গে ওঠে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। ওই নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সেলিম আলতাফকে পরাজিত করে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আবদুর রউফ। ওই সময় আবদুল মান্নান খান স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে ভোট করেছিলেন। আর সামছুজ্জামান ছিলেন নৌকার পক্ষে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মো. আসাদুর রহমান বলেন, নানা কারণে তিন বছরের কমিটি ১১ বছরে গড়িয়েছে। এতে নেতা-কর্মীদের মধ্যে মতভেদ তৈরি হয়েছে। তবে উপজেলা ভোট উৎসবমুখর করতে এবং ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে দলের একাধিক ব্যক্তি প্রার্থী হয়েছেন।

এ বিষয়ে গোলাম জিলানী বলেন, তাঁদের পরিবারের একটি ঐতিহ্য রয়েছে। জনগণের ব্যাপক সাড়াও পাচ্ছেন তিনি। সুষ্ঠু ভোট হলে তিনি জয় লাভ করবেন। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে প্রচার-প্রচারণায় বাধা প্রদানের অভিযোগ তুলেছেন তিনি।

আবদুল মান্নান খান বলেন, জনগণের ভোটে দুবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। দীর্ঘদিন দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। মাঠে জনগণের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন। ২১ তারিখের ভোটে তিনি তিনবার চেয়ারম্যান হওয়ার প্রত্যাশা করছেন।

কুমারখালীতে নির্বাচনী আচরণবিধি দেখভালে নিয়োজিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আমিরুল আরাফাত বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট উপহার দিতে প্রশাসন সার্বক্ষণিক কাজ করছে।