স্ত্রী পা ধরে আছেন, আরেক ব্যক্তি গলায় ওড়না পেঁচিয়ে টানছেন

কিশোরগঞ্জ জেলার মানচিত্র

সোহাগ মিয়ার ঘরের পাশ দিয়ে গতকাল সোমবার বিকেলে কয়েকজন প্রতিবেশী যাচ্ছিলেন। তখন ঘরের ভেতর থেকে হালকা শব্দ শুনতে পান তাঁরা। শব্দটা অস্বাভাবিক মনে হয় তাঁদের। পরে তাঁরা এগিয়ে দেখেন, ঘরের দরজা-জানালা আটকানো। এরপর তাঁরা জানালার ফাঁক দিয়ে দেখতে পান, সোহাগ বিছানায়। সোহাগের দুই পা তাঁর স্ত্রী পারভিন বেগম শক্ত করে ধরে আছেন। আর আরেক ব্যক্তি গলায় ওড়না পেঁচিয়ে টানাটানি করছেন। তখন প্রতিবেশীরা দরজা ধাক্কাতে থাকেন।

এদিকে লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে ওই ব্যক্তি ও পারভিন পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তবে তাঁরা এলাকাবাসীর হাতে ধরা পড়েন। পরে পুলিশ এসে দুজনকে থানায় নিয়ে যান। সোহাগকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। আজ মঙ্গলবার সকালে চেতনা ফিরেছে তাঁর।

কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর শহরের কমলপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এলাকাবাসী জানান, সোহাগের (৪০) গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বড়াইল গ্রামে। তবে সোহাগ দীর্ঘদিন ধরে থাকেন ভৈরবে। পেশায় তিনি পাদুকাশ্রমিক। আর পারভিন (৩০) ব্রাহ্মণবাড়িয়া চিলোকূট গ্রামের বাসিন্দা।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, পারভিন ও সোহাগের ১১ বছরের সংসার। সোহাগকে মারতে পারভিনকে যিনি সাহায্য করছিলেন, তাঁর নাম আল আমিন (২২)। তিনি ভৈরব পৌর শহরের গাছতলাঘাট এলাকার বাসিন্দা। আল আমিনের সঙ্গে পারভিনের সম্পর্ক আছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

গুরুতর আহত অবস্থায় সোহাগ এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। সোহাগ বলেন, এক বছর আগে আল আমিনের সঙ্গে স্ত্রীর মেলামেশার বিষয়টি বুঝতে পেরে বাসা বদল করেন তিনি। তখন পারভিন তাঁকে আশ্বস্ত করেছিলেন, আর কোনো দিন আল আমিনের সঙ্গে মেলামেশা করবেন না। তখন তাঁর মন থেকে সব সন্দেহ দূর হয়। গতকাল দুপুরে তিনি ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। ওড়না পেঁচিয়ে মারার চেষ্টার সময় তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। বুঝতে পারছিলেন, আল আমিন আর পারভিন মিলে মেরে ফেলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু চেষ্টা করেও তাঁদের কাছ থেকে মুক্ত হতে পারছিলেন না। কিছুক্ষণ পর আর কিছু মনে নেই।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ বলেন, সোহাগের গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। গতকাল তাঁকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। তবে সকাল থেকে সোহাগ অনেকটা স্বাভাবিক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পারভিন হলেন সোহাগের দ্বিতীয় স্ত্রী। প্রথম পক্ষের সন্তানেরা দাদা বাড়িতে থাকেন। রাতেই তাঁরা হাসপাতালে যান। আজ সকালে সোহাগের প্রথম পক্ষের সন্তান সায়মন মিয়া বাদী হয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন।

সায়মন মিয়া বলেন, ‘বাবার সঙ্গে এই বিষয়ে আমার কথা হয়েছে। এলাকাবাসী টের না পেলে হয়তো বাবাকে জীবিত পাওয়া যেত না। বাবাকে সরিয়ে দিয়ে আল আমিনের সঙ্গে সংসার পাতার ভাবনা থেকে তিনি (পারভিন) এ পরিকল্পনা করতে পারেন।’

পুলিশি হেফাজতে থাকা পারভিন বলেন, তাঁর স্বামী ভালো নন, চুরি করেন। কিন্তু কেন তিনি সোহাগকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন, তা জিজ্ঞাসা করলে তিনি কোনো কথা বলেননি। আল আমিন বলেন, পারভিনের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। পারভিন তাঁকে ডাকায় তিনি গতকাল তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন।

মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ভৈরব থানার উপপরিদর্শক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, তাঁরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছেন।