নওগাঁয় ৫৯ দাখিল পরীক্ষার্থী বহিষ্কারের ঘটনায় কেন্দ্র সচিবকে অব্যাহতি

নওগাঁ জেলার মানচিত্র

নওগাঁর সাপাহার উপজেলার একটি কেন্দ্রে দাখিল ও সমমান (এসএসসি) পরীক্ষা চলাকালে ৫৯ জন ভুয়া পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কারের পর দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে এবার ওই কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্র সচিবকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

সাপাহার উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সাপাহার উপজেলা সদরের সরফতুল্লাহ ফাজিল মাদ্রাসা দাখিল পরীক্ষার একটি কেন্দ্র। কেন্দ্রটিতে ৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মোট ৭৭৫ জন পরীক্ষা দিচ্ছে। আজ দাখিল পরীক্ষার আরবি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা ছিল। অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্রের দেওয়া ছবি ও স্বাক্ষর যাচাই করে ১০টি প্রতিষ্ঠানের মোট ৫৯ জন পরীক্ষার্থী ভুয়া হিসেবে শনাক্ত হয়।

এর মধ্যে আন্ধারদিঘী মহিলা দাখিল মাদ্রাসার ১৭ জন, তুলশিপাড়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসার ১৪ জন, শিমুলডাঙ্গা দাখিল মাদ্রাসার ১১ জন, পলাশডাঙ্গা দাখিল মাদ্রাসার ৮ জন, দেওপাড়া-শিংপাড়া দাখিল মাদ্রাসার ৩ জন, মানিকুড়া দাখিল মাদ্রাসার ৩ জন, বলদিয়াঘাট মহিলা দাখিল মাদ্রাসার ২ জন এবং আলাদিপাড়া দাখিল মাদ্রাসার ১ জন পরীক্ষার্থীকে অন্যের হয়ে আরবি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়।

ইউএনও মাসুদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষা শুরুর আগে গোপন সূত্রে খবর আসে ওই কেন্দ্রে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার্থীরা জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে আগেই ওই কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (কেন্দ্র সচিব) ও কক্ষ পরিদর্শকদের সতর্ক করে দেওয়া হয় এবং প্রবেশপত্রের ছবির সঙ্গে প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর ছবি ও স্বাক্ষর মিলিয়ে দেখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। যাচাই-বাছাই করে আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৫৯ জন ভুয়া পরীক্ষার্থী পাওয়া যায়। এরা সবাই দাখিল পরীক্ষার জন্য নিবন্ধিত প্রকৃত পরীক্ষার্থী হয়ে পরীক্ষা দিচ্ছিল। ভুয়া পরীক্ষার্থী হিসেবে শনাক্ত হওয়ার পর তাঁদের আটক ও বহিষ্কারের নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই সব পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্র জব্দ করা হয়েছে।

ইউএনও জানান, আটক পরীক্ষার্থীদের বয়স ১৮ বছরের নিচে হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগে বহিষ্কার ছাড়া অন্য কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আটকের পর ওই সব পরীক্ষার্থীর অভিভাবক ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের ডেকে তাঁদের হেফাজতে দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে এ ধরনের জালিয়াতির সঙ্গে না জড়ানোর জন্য সতর্ক করা হয়েছে। একই সঙ্গে কর্তব্যে অবহেলার কারণে ওই কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিবকে পরীক্ষার সব কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এই ঘটনায় ভুয়া পরীক্ষার্থী শনাক্ত হওয়া আটটি প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর বদলি পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামসহ লিখিত প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।

১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া দাখিল ও সমমানের পরীক্ষার আজ ছিল তৃতীয় বিষয়ের পরীক্ষা। অন্যের হয়ে দুই বিষয়ের পরীক্ষা দেওয়ার পর তৃতীয় বিষয়ের পরীক্ষার দিন তারা ধরা পড়েছে।

ইউএনও মাসুদ হোসেন বলেন, বহিষ্কার হওয়া পরীক্ষার্থীরা দাখিল পরীক্ষার্থী হিসেবে নিবন্ধিত প্রকৃত পরীক্ষার্থীর হয়ে পরীক্ষা দিচ্ছিল। এদের কেউ দশম শ্রেণি, আবার কেউ দাখিল পাস করে একাদশ কিংবা দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। আগের দুই বিষয়ের পরীক্ষায়ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে পরীক্ষা দেওয়া হয়েছে কি না এবং এর সঙ্গে কক্ষ পরিদর্শকেরা জড়িত কি না, তা তদন্ত করে দেখা হবে।

এক কেন্দ্রে ৫৯ জন ভুয়া পরীক্ষার্থী শনাক্ত হওয়ার বিষয়ে ওই কেন্দ্রের কেন্দ্রসচিব ও সরফতুল্লাহ ফাজিল মাদ্রাসার সুপারিটেনডেন্ট মোসাদ্দেক হোসেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি প্রথমে আমাকে জানানো হয়। এরপর বিষয়টি আমি ইউএনও স্যারকে অবহিত করি। এরপর ইউএনও স্যারের নির্দেশে কেন্দ্রের ৭৭৫ জন পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্র যাচাই করে ৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৫৯ জন পরীক্ষার্থীকে ভুয়া হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৪ জন ছাত্রী ও ১৫ জন ছাত্র।’