মাদারীপুরে দেবোত্তর জমি দখলের অভিযোগ, প্রতিবাদে সমাবেশ

সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খান। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে শহরের শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ কেন্দ্রীয় মন্দির প্রাঙ্গণে
ছবি: প্রথম আলো

মাদারীপুরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দেবোত্তর ৪৬ শতাংশ জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে। দখল হয়ে যাওয়া জমি উদ্ধারের দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে শহরের শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ কেন্দ্রীয় মন্দির প্রাঙ্গণে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন জেলার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার শুরু হওয়া সমাবেশ চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। এতে ব্যবসায়ী, সামাজিক, রাজনৈতিক দলের নেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খান।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত কালী মন্দিরের ৪৬ শতাংশ জায়গা কয়েক বছর ধরে দখল করে রেখেছেন ১৫ থেকে ২০ জন ভূমিদস্যু ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আছেন। এই চক্রের লোকজন ওই জমিতে দোকানঘর ও বাড়িঘর করে ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা আদায় করছেন। এটা পুরোপুরি অবৈধ। মন্দিরের অস্তিত্ব রক্ষায় প্রশাসনের কাছে এই সম্পত্তি উদ্ধারের দাবি জানান তাঁরা। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে দখলে হয়ে যাওয়া জমি উদ্ধার না হলে তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণাও দেন।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য শাজাহান খান বলেন, কোনো অবস্থাতেই মন্দিরের জায়গা অন্যদের ভোগ করতে দেওয়া হবে না। মন্দিরের জায়গা দখল নেওয়া অন্যায় ও অবৈধ। মসজিদ কিংবা মন্দিরের জমি দখলদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা আছে। এই কালী মন্দিরের জায়গা উদ্ধারে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা নেওয়া হবে। পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিরাও এই সম্পত্তি উদ্ধারে অংশ নেবে। শিগগিরই আইনগত সব ধরনের জটিলতা কাটিয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালানোর নিশ্চয়তা দেন তিনি।

কালী মন্দিরের সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘সব কাগজেই মন্দিরের নামে জমি। আমাদের জমি উদ্ধারের জন্য সরকারি সব দপ্তরে একাধিকবার গিয়ে সহযোগিতা চেয়েছি, আবেদন করেছি। কিন্তু কোনো সমাধান পাইনি। আমাদের আজ পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে এই সমাবেশের ডাক দিয়েছি। আমাদের একটাই দাবি, আমরা মন্দিরের জমি উদ্ধার চাই। এতে আমাদের যদি জীবন দিতে হয়, তাহলে জীবনও আমরা দিব।’

কালী মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক পরাণ কৃষ্ণ চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা ন্যায়বিচার চাইতে সবাই এক হয়েছি। এখানে আমাদের অভিভাবক (শাজাহান খান) আছেন। তিনি সবকিছু জানেন ও বোঝেন। অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়তে হলে মন্দিরের জমি উদ্ধার করতেই হবে। এটা শুধু আমাদের চাওয়া নয়, প্রাণের দাবি।’

রাধা গোবিন্দ কেন্দ্রীয় মন্দিরের সভাপতি বাবুল চন্দ্র দাসের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন মাদারীপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র নুরুল আলম চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সৈয়দ আবুল বাসার, খলিল বাহিনীর প্রধান মুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমান খান, মাদারীপুর বণিক সমিতির সভাপতি সাব্বির হোসেন ভূঁইয়া প্রমুখ।