জমিয়তকে আসন ছাড়ের পরই স্বতন্ত্র নির্বাচনের ঘোষণা বিএনপি নেতার
সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট) আসনটি জোটসঙ্গী জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি উবায়দুল্লাহ ফারুককে ছেড়ে দিয়েছে বিএনপি। আজ মঙ্গলবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ তথ্য জানান। তবে সংবাদ সম্মেলনের পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির স্থানীয় এক নেতা।
স্থানীয় বিএনপির নেতারা জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির জোটসঙ্গী হিসেবে মনোনয়ন পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতা উবায়দুল্লাহ ফারুক। সেবার মামুনুর রশিদ (চাকসু মামুন) বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেলেও জোট রাজনীতির ভাগ-বাঁটোয়ারায় শেষ পর্যন্ত উবায়দুল্লাহ ফারুক চূড়ান্ত মনোনয়ন পান।
এবার আসনটিতে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে ছিলেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি মামুনুর রশিদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান (পাপলু), জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আশিক উদ্দিন চৌধুরী, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাহবুবুল হক চৌধুরী, সংযুক্ত আরব আমিরাত বিএনপির আহ্বায়ক মো. জাকির হোসাইন, যুক্তরাজ্যপ্রবাসী ফাহিম আলম ইসহাক চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সহসভাপতি শরীফ আহমদ লস্কর প্রমুখ। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরীর নামও প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় ছিল। তাঁদের মধ্যে মামুনুর রশিদ (চাকসু মামুন) স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন।
বিএনপির মহাসচিবের সংবাদ সম্মেলনের পরপরই মামুনুর রশিদ ফেসবুকে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি জানান, দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে তিনি এলাকাবাসীর সুখ-দুঃখে সর্বোচ্চটা দিয়ে পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন। এলাকার আরও উন্নয়ন ও মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে তিনি আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
মামুনুর রশিদ এ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য দীর্ঘাদিন ধরে মাঠে আছেন। প্রায় প্রতিদিনই তিনি এলাকায় গণসংযোগসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। মাঠপর্যায়ে দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ ভোটারদের কাছে তাঁর জনপ্রিয়তা বেশি বলে দাবি তাঁর সমর্থকদের।
যোগাযোগ করলে মামুনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমি সিলেট-৫ আসনের মানুষের পাশে আছি। এলাকাবাসীর প্রত্যাশা অনুযায়ীই স্বতন্ত্র নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছি। কোনো দলের প্রার্থী নয়, মানুষের আস্থার প্রতিনিধি হতেই স্বতন্ত্র নির্বাচন করব।’
স্থানীয় লোকজন বলছেন, এ আসনে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর ‘ভোটব্যাংক’ আছে। এটা বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন ইসলামপন্থী দল বিগত একাধিক নির্বাচনে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীর বদলে ‘জোট রাজনীতির’ অংশ হিসেবে আসনটিতে নিজেদের প্রার্থী মনোনয়ন দেয়।
স্বাধীনতার পর আসনটিতে চারবার আওয়ামী লীগ, তিনবার জাতীয় পার্টি ও দুবার স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হন। এ ছাড়া বিএনপি, ইসলামী ঐক্যজোট ও জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী একবার করে জয়ী হয়েছেন। সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন। তাঁর বাবা প্রয়াত আল্লামা আবদুল লতিফ চৌধুরী সারা দেশে ‘ফুলতলী হুজুর’ হিসেবে পরিচিত।
বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সর্বশেষ ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে আসনটিতে ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন। ওই একবারই এখানে বিএনপির প্রার্থী জয়ী হন। এরপর ২০০১ সাল থেকে জোট রাজনীতির অংশ হিসেবে বিএনপি আসনটিতে প্রতিবার ইসলামপন্থী দলের নেতাদের প্রার্থী করেছে। ২০০১ ও ২০০৮ সালে বিএনপির জোটসঙ্গী হিসেবে আসনটিতে জামায়াত নেতা ফরীদ উদ্দিন চৌধুরী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি ২০০১ সালে বিজয়ী হন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, মামুনুর রশিদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে খেজুরগাছ প্রতীকের প্রার্থী উবায়দুল্লাহ ফারুককে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত বেশির ভাগ বিএনপির ভোটার কোন প্রতীকে ভোট দেবেন, এর ওপরই জয়-পরাজয়ের হিসাব-নিকাশ নির্ভর করবে।
তবে উবায়দুল্লাহ ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপির সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা আমার সঙ্গে থাকবেন। কেবল চাকসু মামুন শেষ পর্যন্ত কী করবেন, সেটা এখনো সঠিকভাবে বলতে পারব না। তবে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ আর বিএনপি ঐক্যবদ্ধভাবে খেজুরগাছ প্রতীকের জয় নিশ্চিত করতে কাজ করবে।’
এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে মাঠে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন জেলার নায়েবে আমির আনোয়ার হোসেন খান। এখানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রেজাউল করিম আবরার, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের রেজাউল করিম জালালী, খেলাফত মজলিসের সিলেট জেলার উপদেষ্টা আবুল হাসান ও ইসলামী ঐক্যজোটের ফয়জুল হক জালালাবাদী প্রার্থী হিসেবে কাজ করছেন। এ ছাড়া জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে তিনটি আসনে জাতীয় পার্টি প্রার্থী ঘোষণা করলেও এ আসনে এখন পর্যন্ত দলটি কোনো প্রার্থী দেয়নি।