ঝুঁকি নিয়ে বাঘ-সিংহের ডেরায়

জানালা খোলা মিনিবাস একের পর এক প্রবেশ করে বাঘ ও সিংহের মতো ভয়ংকর সব প্রাণীর বেষ্টনীর ভেতর।

পর্যটক মিনিবাসের খোলা জানালা দিয়ে প্রাণী দেখছে একটি শিশু। মাত্র দুই-তিন হাত দূরে তখন তিনটি সিংহ শুয়ে ছিল
প্রথম আলো

প্রচণ্ড গরমে মিনিবাসের ভেতর অতিষ্ঠ সবাই। শীতাতপনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা (এসি) অকেজো। বাসের জানালাগুলো খোলা রাখা ছাড়া কোনো উপায় নেই। জানালা খোলা বাস একের পর এক প্রবেশ করে বাঘ ও সিংহের মতো ভয়ংকর সব প্রাণীর বেষ্টনীতে। কখনো কখনো বাসের খুব কাছাকাছি চলে আসে প্রাণীগুলো। এসব প্রাণী হামলে পড়লে যেকোনো সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই গাজীপুরের শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষের। বাসগুলোর এসি মেরামত করে জানালা বন্ধ করে দর্শনাথী বহনের ব্যবস্থা নিচ্ছে না তারা।

দেশের সবচেয়ে বড় সাফারি পার্কটিতে আটটি দর্শনার্থীবাহী মিনিবাসের মধ্যে ছয়টিরই শীতাতপনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা পুরোপুরি অকার্যকর। এ নিয়ে দর্শনার্থীদের অনেক অভিযোগ। এসব মিনিবাসের ভেতর বৈদ্যুতিক পাখাও নেই। গরমের মধ্যে এসি না থাকায় জানালা খোলা রাখার ঝুঁকির বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানো হলেও কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন মিনিবাসের একাধিক চালক।

এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। মিডিয়াতে কথা বলা আমার নিষেধ আছে।
রফিকুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক

গতকাল শুক্রবার দুপুরে একটি পর্যটক বাসের ভেতর অবস্থান করে দেখা যায়, প্রচণ্ড গরমে চালক, পর্যটকসহ সবাই ঘামছেন। জানালাগুলো খুলে দিয়ে প্রাণী দেখছেন দর্শনার্থীরা। আফ্রিকান কোর সাফারির ভেতরে ভালুকের বেষ্টনীতে অনেক দর্শনার্থী জানালার বাইরে হাত নিয়ে মুঠোফোন নিয়ে ছবি তুলছেন। কিছুক্ষণ পর বাঘ ও সিংহের বেষ্টনীতেও সব কটি জানালা খোলা ছিল।

পর্যটক মিনিবাসের এক চালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা পার্ক অফিসে বারবার জানাচ্ছি এসি ঠিক করার জন্য। বিষয়টি একদমই আমলে নিচ্ছেন না তাঁরা। চার-পাঁচ মাস ধরে এ নিয়ে জানানো হচ্ছে। গরমে অতিষ্ঠ পর্যটকদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত ঝগড়া হয়। বাধ্য হয়ে জানালা খোলা রাখতে দিই। বাঘ-সিংহের আক্রমণ হতে পারে জেনেও জানালা খোলা রাখা ছাড়া আর উপায় নাই।’

ভালুকের বেষ্টনীতে প্রবেশের সময় দেখা যায়, স্বয়ংক্রিয় ফটক খোলার ব্যবস্থাও কাজ করছে না। ওয়াচ টাওয়ারে অবস্থান করা এক ব্যক্তি নেমে এসে ঝুঁকি নিয়ে ফটকটি হাত দিয়ে খুলে দিচ্ছেন। ফটকটি খুলে দিয়ে দ্রুত তিনি আবার ওপরে চলে যান। ওয়াচ টাওয়ারের ওই ব্যক্তি তাঁর পরিচয় না দিয়ে জানান, কাজটি ঝুঁকিপূর্ণ, কিন্তু কর্তৃপক্ষ স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার যন্ত্রপাতি ঠিক করে না।

গাজীপুরের বোর্ড বাজার থেকে স্ত্রী ও ছয় বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে সাফারি পার্ক পরিদর্শনে এসেছেন আতিকুর রহমান। পর্যটক মিনিবাস থেকে নেমে মেয়ের শরীরের ঘাম মুছে দিচ্ছিলেন তিনি। একটু এগিয়ে গিয়ে টিকিট কাউন্টারের লোকজনকে বাসে এসি না থাকার কষ্টের বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করেন।

আতিকুরের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, বাসে এসি নেই, প্রচণ্ড গরম। প্রত্যেক লোক ঘেমে অস্থির। জানালা খোলা রাখলেও বাতাস আসে না। একটা ফ্যান পর্যন্ত নেই। অথচ টিকিটের দাম ১০০ টাকার পরিবর্তে বাড়িয়ে ১৫০ টাকা করা হয়েছে। বাস চলাচলের সময় প্রচণ্ড ঝাঁকি, রাস্তা ঠিক নেই। বাধ্য হয়ে জানালা খোলা রাখতে হয়, কিন্তু জানালা খোলা রাখা তো কোনোমতেই নিরাপদ না।

গাজীপুরে টঙ্গী থেকে সপরিবার ঘুরতে আসা মাহবুবুর রহমান নামের এক চাকরিজীবী বলেন, বাঘ-সিংহের মতো ভয়ংকর প্রাণীগুলো বন্ধ জানালার বাসে পর্যন্ত আক্রমণ করে বসে। অথচ এখানে গরমের কারণে জানালা খোলা রাখতে বাধ্য হচ্ছেন সবাই। এটি সাফারি পার্কের নিরাপত্তা ঘাটতি বলে মনে করেন তিনি।

দর্শনার্থীদের ভোগান্তির বিষয়ে যোগাযোগ করা হয় কোর সাফারির সামনের কাউন্টারে দায়িত্বরত দিদার হোসেনের সঙ্গে। মোট কয়টি গাড়িতে এসি আছে, প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সব কটি গাড়িতেই এসি আছে। কতগুলো কার্যকর, এমন প্রশ্নে দিদার বলেন, ছয়টি গাড়ির এসি নষ্ট। এগুলো ঠিক করার জন্য পার্ক অফিস ও ইজারাদারদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাঁরা ঠিক করে দেবেন।

এ বিষয়ে সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। মিডিয়াতে কথা বলা আমার নিষেধ আছে।’