জয়–পরাজয়ের নিয়ামক চা-শ্রমিকদের ভোট

হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর ও চুনারুঘাট) আসনের ভোটারের একটা বড় অংশ চা-শ্রমিক। ফলে এ আসনের প্রার্থীদের প্রচারের মূল কেন্দ্রে থাকে চা-বাগান। এবারও ব্যতিক্রম নেই। প্রার্থীরা চা-বাগান চষে বেড়াচ্ছেন। তাঁরা চা-শ্রমিকদের নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলছেন, এ আসনটি আওয়ামী লীগের দুর্গ ধরা হয়। কারণ, স্বাধীনতার পর থেকে এ আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই বেশির ভাগ সময়ে জয় পেয়েছেন। এ আসনটি চা-বাগান অধ্যুষিত এলাকা। দুটি উপজেলায় চা-শ্রমিকের ভোট আছে লাখ খানেক। এ কারণে এ আসনটিতে জয়-পরাজয়ের নিয়ামক হলো চা-শ্রমিকদের ভোট।

দলের নেতারা আরও বলেন, এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী টানা দুবারের সংসদ সদস্য, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। তাঁর শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে মাঠে আছেন যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ সায়েদুল হক ওরফে সুমন (ঈগল প্রতীক)। তিনি এলাকায় ‘ব্যারিস্টার সুমন’ হিসেবে পরিচিত। এ দুই প্রার্থীই চা-বাগানের শ্রমিকদের ভোট ব্যাংক নিজের করতে চাইছে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীর বাড়ি মাধবপুর উপজেলার বানেশ্বর গ্রামে। তিনি এবার ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছেন। সকাল ছয়টায় ঘর থেকে বের হয়ে রাত একটা পর্যন্ত টানা প্রচারণা চালাচ্ছেন। প্রতিদিন সাত থেকে আটটি সমাবেশ করছেন।

গতকাল রোববার বেলা তিনটায় চুনারুঘাট রেমা চা-বাগানে গণসংযোগে যান আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাহবুব আলী। এ সময় তাঁকে সাংবাদিকেরা জিজ্ঞেস করেন, এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় চা-বাগানের ভোটাররা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এ বিষয়টিকে তিনি কীভাবে দেখছেন? জবাবে মাহবুব আলী বলেন, এখানকার প্রার্থীরা নৌকার পক্ষে সব সময়ই। এবারও তাঁরা তাঁকে জয়ী করে এর প্রমাণ দেখাবেন। এ ছাড়া তিনি গত ১০ বছর এ আসনের দায়িত্বে থেকে শ্রমিকদের জন্য নানা কাজ করেছেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ সায়েদুল হকের বাড়ি চুনারুঘাট উপজেলার বড়াইল গ্রামে। তিনি ছাত্রলীগ পরে যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। এবার দল থেকে মনোনয়ন চেয়ে না পাওয়ায় তিনি ঈগল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। গতকাল রোববার বেলা তিনটায় তিনি যান চুনারুঘাট উপজেলার দারাগাঁও চা-বাগানে। অনেকে তাঁর সঙ্গে সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এ সময় নারায়ণ সাঁওতাল নামের একজন বলেন, ‘সুমন ভাইকে আমরা আগ থেকে চিনি। ফেসবুকে তাঁর লাখো অনুসারী আছে।’

এ সময় সায়েদুল হক বলেন, ‘আমি একজন হেভিওয়েট প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। তবে দলের অধিকাংশ নেতা-কর্মী ও এলাকার নতুন প্রজন্মের ভোটাররা আমার পক্ষ আছেন। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জয়ী হব বলে আমার বিশ্বাস।’

দলের একাধিক সূত্র আরও জানিয়েছে, এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ঘরানার দুজন প্রার্থী হওয়ার কারণে দলের নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। মাধবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও মাধবপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র শাহ মোহাম্মদ মুসলিম, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বহরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন, মাধবপুর উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক আতাউস সামাদ ও চুনারুঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রজব আলীসহ অনেকে সায়েদুল হকের পক্ষে কাজ করছেন।

এ বিষয়ে মাধবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রীর কাছে গেলে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত সহকারীর সঙ্গে কথা বলতে বলেন। এতে দুর্ভোগ বাড়ে। প্রতিমন্ত্রী আবার যদি সংসদ সদস্য হন, তা হলে মানুষ অবহেলার শিকার হবে। তাই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী সায়েদুল হকের জন্য কাজ করছি। সে তরুণ ও শিক্ষিত মানুষ। তিনি এলাকার মানুষের উপকার করবেন।’

২৩টি চা-বাগান নিয়ে গঠিত লস্করপুরভ্যালির সভাপতি রক্সিন র‌্যালি বলেন, ‘এবার নৌকার পাশাপাশি ঈগলও আছে। আমাদের ভোটে যেহেতু জয়-পরাজয়, তাই এবার আমরা হিসাব করেই ভোট দেব।’

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, এ আসনের অপর ছয় প্রার্থী হলেন আবু ছালেহ (ইসলামী ঐক্যজোট), আহাদ উদ্দিন চৌধুরী (জাতীয় পার্টি), মোহাম্মদ আবদুল মমিন (বাংলাদেশ কংগ্রেস), মো. মোখলেছুর রহমান (বিএনএম), মো. রাশেদুল ইসলাম খোকন (বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট), সৈয়দ মো. আল আমিন (বাংলাদেশ কংগ্রেস)।