নরসিংদীতে বিএনপির বৈঠকে অভিযান, ২৬ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে পুলিশের মামলা

গ্রেপ্তার
প্রতীকী ছবি

নরসিংদীতে বিএনপির ২৬ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৪০-৫০ জনকে আসামি করে বিস্ফোরক আইনে মামলা করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতে নরসিংদী মডেল থানায় উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মনির হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলামকে।

নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভূঁইয়া আজ বুধবার দুপুরে প্রথম আলোকে এই মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গতকাল বিকেলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুল কবিরের নেতৃত্বে জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়কদের নিয়ে সাংগঠনিক বৈঠক বসেছিল। বৈঠক শুরুর কিছুক্ষণ পরই নরসিংদী মডেল থানার ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়ার নেতৃত্বে শতাধিক পুলিশ সদস্য বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে অভিযান চালান। অভিযানের কারণে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কার্যালয়ের ভেতরে অবরুদ্ধ ছিলেন বিএনপি নেতারা। এ সময় অন্তত ১০ জন নেতা-কর্মীকে আটক করে পুলিশ। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা সময় ধরে চলা অভিযানকালে একটি রিভলবার, কিছু ককটেলসদৃশ বস্তু ও অর্ধশতাধিক মশাল জব্দ করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আগামী ১০ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশ বানচাল করতে ও আমাদের নেতা-কর্মীদের মনোবল ভেঙে দিতে পুলিশ এসব অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধারের নাটক করছে।
খায়রুল কবির, যুগ্ম আহ্বায়ক, নরসিংদী জেলা বিএনপি

আটক ১০ জনের মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে চারজনকে ছেড়ে দিয়ে বাকিদের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গ্রেপ্তার ৬ আসামি হলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম, করিমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সদস্যসচিব মনির হোসেন, জেলা ছাত্রদল নেতা মাহবুবুর রহমান, বিএনপি কর্মী আবদুল বাতেন, তফাজ্জল হোসেন ও কামাল ভূঁইয়া।

মামলার বাদী ও নরসিংদী মডেল থানার এসআই মো. মনির হোসেন জানান, তাঁদের কাছে গোপন তথ্য ছিল, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বানচাল, সরকার ও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, যানবাহন, শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধনের মতো নাশকতা সৃষ্টির জন্য গোপন বৈঠক চলছিল। পরে সেখানে অভিযান চালিয়ে তাঁরা একটি রিভলবার, বস্তাভর্তি ককটেলসদৃশ বস্তু ও অর্ধশতাধিক মশাল জব্দ করেছেন। জনগণের মধ্যে ভীতি ও ত্রাস সৃষ্টির জন্য বিএনপি নেতা-কর্মীরা এসব নিজেদের হেফাজতে রেখেছিলেন। এ ছাড়া তাঁরা অভিযানের সময় সরকারি কাজে বাধা দেন। এসব অভিযোগে ২৬ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ৪০-৫০ জনকে আসামি করে বিস্ফোরক আইনে মামলাটি করা হয়েছে।

জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক খায়রুল কবির বলেন, ‘আমরা নিজ কার্যালয়ের ভেতরে সাংগঠনিক বৈঠক করছিলাম। ওই বৈঠক চলাকালে পুলিশ এই অভিযানের নাটক সাজায়। যে মশাল উদ্ধারের কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো এক বছর ধরে কার্যালয়ের ছাদে পড়ে ছিল। রিভলবারটিও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলামের লাইসেন্সকৃত। অন্যদিকে বস্তাবন্দী যে ককটেলের কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো পুলিশ নিজেরা রেখে নাটক সাজিয়েছে।’

খায়রুল কবির আরও বলেন, ‘আগামী ১০ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশ বানচাল করতে ও আমাদের নেতা-কর্মীদের মনোবল ভেঙে দিতে পুলিশ এসব অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধারের নাটক করছে। এর আগেও সদর উপজেলার আলোকবালীতে আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি থেকে ককটেল ও বোমা বানানোর সরঞ্জাম উদ্ধারের ঘটনায় আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে পুলিশ। এভাবে একের পর এক মামলা দিয়েও আমাদের থামাতে পারবে না তারা।’

ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়া বলেন, ‘গতকালের অভিযানের ঘটনায় রাতেই মামলা করেছেন উপপরিদর্শক মনির হোসেন। আসামি গ্রেপ্তারের স্বার্থে আমরা এখনই তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে চাইছি না। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে ৬ জনকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’