দিনভর ফাঁকা সড়ক-ফুটপাত, আ.লীগের সমাবেশ শেষে আবার পুরোনো রূপে নারায়ণগঞ্জ নগর

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সমাবেশের আগে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া গোলচত্বর এলাকায় গাড়ি চলাচল ছিল কম। সন্ধ্যার পর সেখানে গাড়ি চলাচল বাড়ে
ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জ নগরীর চাষাঢ়ায় প্রতিদিন সকাল থেকে তীব্র যানজট থাকে। গাড়ির চাপে হেঁটে চলাচল করাও দুষ্কর হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকা পড়ে ভোগান্তি পোহাতে হয় নগরবাসীকে। কিন্তু শনিবার সকালের এ চিত্র ছিল ভিন্ন। সড়কে বেশি গাড়ি নেই, ফুটপাতে নেই হকার।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের আগমন উপলক্ষে নগরের চিরচেনা যানজট হঠাৎ করে ‘উবে’ যাওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন নগরবাসী। তবে সমাবেশ শেষ হতেই সন্ধ্যার পর থেকে নগরীর বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাতজুড়ে হকার বসতে দেখা গেছে। গাড়ি চলাচলও বাড়ে।

শনিবার দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান শহরের চাষাঢ়া বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) নতুন ভবন উদ্বোধন করেন। বিকেলে শহরের ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় জেলা ও আওয়ামী লীগের ব্যানারে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি।

স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, শহরের চাষাঢ়া গোলচত্বরে মিলেছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোড, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরোনো সড়ক, নারায়ণগঞ্জ আদমজী-ডেমরা সড়ক ও শহরের প্রধান বঙ্গবন্ধু সড়ক। এ ছাড়া এই সড়কের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে দুটি আঞ্চলিক সড়ক চাষাঢ়া বালুর মাঠ ভাষাসৈনিক সড়ক ও ভাষাসৈনিক সামসুজ্জোহা সড়ক। ব্যস্ততম এই গোলচত্বর ছয় সড়কের মিলনস্থল হওয়ায় অন্য সময় তীব্র যানজট লেগে থাকে। এ ছাড়া সড়কের পাশে অসংখ্য গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।  

শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, গোলচত্বর প্রায় ফাঁকা। যানবাহনের চাপ ও যানজট ছিল না। অন্য সময় সড়কের পাশে অবৈধভাবে অসংখ্য গাড়ি গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা হলেও পুলিশি তৎপরতার কারণে শনিবার সেটাও ছিল না। হকার না থাকায় ফুটপাত ছিল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ছিল ফাঁকা। নগরীতে মানুষ স্বস্তি নিয়ে যাতায়াত করছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সমাবেশের কারণে শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া গোলচত্বর এলাকায় সোনালী ব্যাংকের সামনের ফুটপাতে কোনো হকার বসেনি। তবে সন্ধ্যার পর আবার সেখানে হকারেরা বসেন
ছবি: প্রথম আলো

সকালে পঞ্চবটী এলাকার ব্যবসায়ী আল আমিন বলেন, ‘শুনেছি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসবেন। এ কারণে শহরে যানজট নেই। ফুটপাতগুলোও ফাঁকা। ফাঁকা ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে খুব ভালো লাগছে।’

শহরের খানপুর এলাকার বাসিন্দা গৃহিণী আফসানা বেগম পানোরামা প্লাজায় কেনাকাটা করতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘শহরটা যদি সব সময় এমন ফাঁকা থাকত, তাহলে খুব ভালো হতো। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসলে যদি শহরের সড়ক ও ফুটপাত এমন ফাঁকা হয়ে যায়, তাহলে আমরা চাইব প্রতিদিন আমাদের এখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসুক। তাহলে আমরা স্বস্তি নিয়ে সব সময় যাতায়াত করতে পারব।’

তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সমাবেশে শেষ হলে সন্ধ্যার পর নগরীর প্রধান সড়ক আবার হকারদের দখলে যায়। ফুটপাতগুলোতে হকারদের বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসতে দেখা গেছে। সড়কেও যানবাহনের চাপ কিছুটা বাড়ে।

সন্ধ্যায় স্থানীয় ব্যবসায়ী কামরুল হাসান বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সমাবেশের কারণে পুলিশ তৎপর ছিল। ফুটপাতেও কোনো হকার বসেনি। সমাবেশ শেষ হতে না হতেই ফুটপাতে আগের মতো হকার বসেছে।

চাষাঢ়ায় ফুটপাতে জুতা বিক্রি করতে বসা হকার নয়ন মিয়া বলেন, সমাবেশের কারণে তাঁদের সকালে ফুটপাতে বসতে পুলিশ ও হকার নেতারা নিষেধ করেছিলেন। সমাবেশ শেষ হওয়ার পর সন্ধ্যার পর তাঁরা ফুটপাতে পণ্য নিয়ে বসেছেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমা প্রথম আলোকে বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জনসভার নিরাপত্তার কারণে রাস্তাঘাট পরিষ্কার রাখা হয়েছিল। হকারদের অনুরোধ করেছিলেন, তাঁরা যেন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ফুটপাতে না বসেন। সমাবেশের কারণে শহরের ঢোকার বিভিন্ন পয়েন্টে তিন চাকার যানবাহন ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এ কারণে শহর ফাঁকা ছিল। সন্ধ্যার পর থেকে পুলিশি তৎপরতা শিথিল করার কারণে সেই গাড়িগুলো সড়কে চলে এসেছে, এ কারণে গাড়ির চাপ বেড়েছে। সমাবেশ শেষ হওয়ায় ফুটপাতেও হকার বসেছে।