ফরিদপুরে নির্মাণাধীন সেতুর পাইলিংয়ের মাটি ধসে ৩ শ্রমিকের মৃত্যু

ফরিদপুরে নির্মাণাধীন সেতুর পাইলিংয়ের খনন করা মাটি ও খালপাড় ধসে সাত শ্রমিক হতাহত হয়েছেন। বুধবার সদরপুর উপজেলার ভাষাণচর ইউনিয়নের জমাদ্দার ডাঙ্গী এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার একটি খালের ওপর নির্মাণাধীন সেতুর পাইলিংয়ের জন্য খনন করা মাটি ধসে তিন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার ভাষাণচর ইউনিয়নের জমাদার ডাঙ্গী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত শ্রমিকেরা হলেন বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার উদয়পুর উত্তরকান্দি গ্রামের আল আমিন খাঁর ছেলে জাবেদ খাঁ (২৩), ফরিদপুর সদর উপজেলার কবিরপুর গ্রামের আফজাল শেখের ছেলে অন্তর শেখ (২২) ও কুজুরদিয়া গ্রামের ইসমাইল মীরের ছেলে জুলহাস মীর (২০)।

এ ঘটনায় মাটিচাপা পড়ে সেখানে কর্মরত চার শ্রমিক আহত হন। তাঁদের উদ্ধার করে সদরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। আহত শ্রমিকেরা হলেন সদর উপজেলার কুজুরদিয়া গ্রামের সুমন খান (২৭), শোলাকুন্ডু গ্রামের ওয়াহিদুল ইসলাম (৩০), ঘোড়াদহ গ্রামের রাসেল শেখ (২৫) ও নজরুল ইসলাম (৩০)।

ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, সদরপুর উপজেলার আমীরাবাদ এলাকার ভূবনেশ্বর নদ থেকে শুরু হয়ে একটি খাল কবিরহাট এলাকার দিকে গেছে। ওই খালের জমাদার ডাঙ্গী এলাকার তোতা ফকিরের বাড়ির সামনে সেতুটির নির্মাণকাজ করছিলেন শ্রমিকেরা। সেতু নির্মাণের জন্য গভীর গর্ত করে পাইলিং করা হয়। গর্তের মাটি খালের পাড়ে স্থানীয় তোতা ফকিরের বাড়ির কিনার ঘেঁষে স্তূপ করে রাখা হয়েছিল। বৃষ্টিতে সেই মাটির কিছু অংশ ধসে খালের ভেতরে পড়ে। খালের ভেতরে নেমে সেই মাটি অপসারণ করছিলেন শ্রমিকেরা। এ সময় খালের পাশে স্তূপ করে রাখা মাটি এবং খালপাড়ের মাটি ধসে পড়লে সাত শ্রমিক তার নিচে চাপা পড়ে। তাঁদের মধ্যে তিনজনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। এলাকাবাসী বাকি চারজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

সদরপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মকর্তা আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, দুপুর ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা চেষ্টার পর মাটির স্তূপের মধ্য থেকে ওই তিন শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। বাকি চারজন শ্রমিককে আগেই এলাকাবাসী উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আহসান মাহমুদ বলেন, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। দাফন–কাফনের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মৃত প্রত্যেক শ্রমিকের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার বিষয়টি তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেতুতে কর্মরত দুই শ্রমিক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা বারবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জানালেও মাটি সরানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। মাটির পাশে গাইড দেওয়ার কথা বলা হলেও তারা তা করেনি। উল্টো শ্রমিকদের হুমকি দিয়ে কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছিল।

৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটির নির্মাণকাজ করছিল ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফের ভাই আসিফ ইমতিয়াজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে কথা বলতে ঠিকাদার শাহ মো. আসিফ ইমতিয়াজের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। তাঁর ভাই শাহ মো. ইশতিয়াকের মাধ্যমেও চেষ্টা করে তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

সদরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুব্রত গোলদার বলেন, কয়েক দিন আগে সেতুটির পাইলিং করা হয়। সেখানে মাটির স্তূপ করা ছিল। সেই মাটি ধসে তিন শ্রমিক নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন। তিনি বলেন, লাশের সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হবে। নিহত শ্রমিকদের স্বজনদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ফরিদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহিদুজ্জামান বলেন, দুর্ঘটনার বিষয়টি ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে জানানো হয়েছে। সেখান থেকে একটি প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে।