‘বাংলাদেশের পতাকার লাল রঙে রণদা প্রসাদ সাহার রক্ত লেগে আছে’

দানবীর রণদা প্রসাদ সাহার জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি আনিসুল হককে ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইলের মির্জাপুর গ্রামেছবি: প্রথম আলো

‘বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে আমরা গৌরব করি। বিজয়ের গৌরবে আমরা লাল-সবুজ পতাকা ওড়াই। “আমরা সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি” গানটা যখন বাজে, তখন আমাদের চোখ ছলছল করে। আমাদের গৌরবের সেই পতাকার মাঝখানে লাল রঙের মধ্যে আরপি সাহার (রণদা প্রসাদ সাহা) রক্ত লেগে আছে। তাঁর ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহার রক্ত লেগে আছে। মির্জাপুর গ্রামে শহীদ হওয়া ৫৭ জন মানুষের রক্ত লেগে আছে।’

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে দানবীর রণদা প্রসাদ সাহার ১২৭তম জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক এসব কথা বলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলা সদরের মির্জাপুর গ্রামে রণদা নাট মন্দির প্রাঙ্গণে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন গ্রামবাসী।

মোমবাতি প্রজ্বালনের মাধ্যমে দানবীর রণদা প্রসাদ সাহার জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শুরু হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর গ্রামে
ছবি : প্রথম আলো

আনিসুল হক বলেন, ‘রণদা প্রসাদ সাহা, ভবানী প্রসাদ সাহাকে ১৯৭১ সালের ৭ মে ধরে নিয়ে গেল। তাঁরা আর ফিরবেন না। তাঁদের সঙ্গে মির্জাপুর গ্রামের নিহতরাও ফিরবেন না। তবে আমাদের বাংলাদেশের গৌরবের পতাকা হারাবে না। এই পতাকা অক্ষুণ্ন থাকবে।’ তিনি বলেন, রণদা প্রসাদ সাহার কর্মময় জীবন ইতিহাসের আঁকড়। এখান থেকে অনেক কিছু নেওয়া যায়, যা দিয়ে খুব ভালো উপন্যাস লেখা যায়। ছবি করা যায়। এ বিষয়ে তিনি উদ্যোগ নেবেন বলে জানান।

কুমুদিনী হাসপাতালের পরিচালক প্রদীপ কুমার রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজীব প্রসাদ সাহা, পরিচালক শ্রীমতী সাহা, শহীদ ভবানী প্রসাদ সাহা, মির্জাপুর সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাহমিনা জাহান, উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবু আহমেদ, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার দুর্লভ বিশ্বাস, মির্জাপুর কলেজের সাবেক ভিপি আবু আহমেদ, কবি গোপাল কর্মকার, মির্জাপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শামসুল ইসলাম, সহসভাপতি জহিরুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।

রণদা প্রসাদ সাহার জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি আনিসুল হককে মানপত্র দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

বিকেল সোয়া চারটায় অতিথিদের আসন গ্রহণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এ সময় এলাকাবাসী অতিথিদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান এবং উত্তরীয় পরিয়ে দেন। সাড়ে চারটায় রাজীব প্রসাদ সাহার মেয়ে রাহী সাহা শিশুদের নিয়ে মোমবাতি প্রজ্বালন শুরু করে। এ সময় তাঁদের সঙ্গে গ্রামবাসী ১২৭টি মোমবাতি জ্বালিয়ে দেন। অতিথিদের আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে কবিতা আবৃত্তি, নাচ ও গান পরিবেশন করে শিশুরা।

রাজীব প্রসাদ সাহা বলেন, মির্জাপুর গ্রামবাসী স্বাধীনতার আগে ও পরে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তাঁদের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে না। তবে তাঁদের স্মৃতি ধরে রাখার উদ্যোগ নিতে হবে। এ সময় তিনি প্রতিবছর রণদা প্রসাদ সাহার জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠান আয়োজন করায় মির্জাপুর গ্রামবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।