মানসিকভাবে অসুস্থ তরুণী তিন বছর ধরে শিকলবন্দী

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার কেশরিয়াখোলা গ্রামের মানসিকভাবে অসুস্থ সোনিয়া বৈশাখীকে এভাবে শিকলবন্দী করে রাখা হয়। গত শনিবারের ছবিপ্রথম আলো

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার সুন্দলপুর ইউনিয়নের কেসরিয়াখোলা গ্রামের মানসিকভাবে অসুস্থ এক তরুণীকে বাড়ির উঠানে তিন বছর ধরে শিকলবন্দী করে রাখা হয়েছে। তাঁর নাম সোনিয়া বৈশাখীকে (২০)। তিনি কৃষক বিল্লাল হোসেনের মেয়ে।

সোনিয়ার মা আয়েশা আক্তার জানান, সোনিয়া বৈশাখী ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় হঠাৎ একদিন মানসিকভাবে অসুস্থ পড়ে। চিকিৎসার জন্য দ্রুত স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে পাবনা মানসিক হাসপাতাল, বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল, বিভিন্ন কবিরাজের কাছে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ছয় বছর ধরে চিকিৎসা করাতে গিয়ে ভূমিহীন কৃষক বিল্লাল হোসেন নিঃস্ব হয়ে পড়েন।

বিল্লালের বড় সংসার। চার মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে বড় দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। বড় ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে এবং ছোট ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে করছে। বিল্লাল হোসেনের কোনো জমিজমা নেই। অন্যের জমিতে দিনমজুরি করে যে টাকা পান, তা দিয়ে পরিবারের সদস্যদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা ও সোনিয়ার চিকিৎসা চালাতে হয়।

পৈতৃক সূত্রে পাওয়া মাত্র দেড় শতাংশ জায়গার ওপর একটি পুরোনো টিনের ঘরে বসবাস পরিবারটির। সংস্কারের অভাবে বসতঘরের টিনের চালাগুলো মরিচায় খেয়ে ফেলেছে। অসংখ্য ফোঁটা সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি শুরু হলে পুরো বসতঘর বৃষ্টির পানিতে ভিজে একাকার হয়ে যায়। রাতে ঝড়-বৃষ্টি হলে কেউ ঘুমাতে পারেন না।

তিন বছর ধরে টাকার অভাবে অসুস্থ সোনিয়াকে যথাযথ চিকিৎসাসেবা দিতে পারছেন না বিল্লাল। এতে সোনিয়ার মানসিক সমস্যাটি দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। উথালপাতালের মাত্রাও বেড়ে গেছে। বসতঘরের খাবারের প্লেট ও আসবাব নিয়মিত ভাঙচুর করে। নিরুপায় হয়ে পায়ে শিকলে তালাবদ্ধ করে দিনে ঘরের বাইরে এবং বসতঘরে রাখতে হচ্ছে সোনিয়াকে।

সোনিয়ার দাদি মমতাজ বেগম, চাচি আমেনা বেগম, ফুফু নাজমা আক্তার বলেন, ভূমিহীন বিল্লাল সোনিয়ার চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। দরিদ্র থেকে আরও দরিদ্র হয়ে পড়েছেন। ছেলে দুটিও ছোট। পরিবারের উপার্জনক্ষম লোক বলতে একমাত্র বিল্লাল। সোনিয়ার চিকিৎসা সরকারিভাবে না হলে পরিবারের পক্ষে আর সম্ভব হবে না।

সুন্দলপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আসলাম মিয়াজী বলেন, ‘সোনিয়ার অসুস্থতার কথা এবং শিকলে তালা দিয়ে বেঁধে রাখার কথা আমার জানা নেই। তবে পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসার বিষয়টি আমার কাছে এসে বিস্তারিত জানালে সরকারিভাবে সহযোগিতা করার চেষ্টা করব এবং এলাকাবাসীর সহযোগিতায় আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।’

বিষয়টি নজরে আনা হলে দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আরাফাতুল আলম বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ লিখিতভাবে জানালে সরকারিভাবে এবং ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতা করার চেষ্টা করবেন।