টাঙ্গাইলে সাবেক এমপির বাড়ি দখল করে ‘পাগলের আশ্রম’, গ্রেপ্তার মারইয়াম রিমান্ডে

টাঙ্গাইলের সাবেক সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলামের শহরের আকুরটাকুর পাড়ার ছয়তলা বাসভবন
ছবি: প্রথম আলো

টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) জোয়াহেরুল ইসলামের বাড়ি দখল করে ‘পাগলের আশ্রম’ চালু করার ঘটনায় গ্রেপ্তার মারইয়াম মুকাদ্দাসকে (মিষ্টি) চার দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।

টাঙ্গাইল সদর আমলি আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম মাহবুব খান শুনানি আজ সোমবার শেষে এ রিমান্ড আদেশ দেন। গতকাল রোববার দিবাগত ১২টার দিকে মারইয়ামকে টাঙ্গাইল শহরের আকুরটাকুর হাউজিং এলাকার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে সদর থানা পুলিশের একটি দল।

আরও পড়ুন

মারইয়াম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক। তাঁর স্বামীর নাম শাহ্ আলমাস। বাবার নাম মাজাহারুল ইসলাম। তাঁদের গ্রামের বাড়ি বাসাইল উপজেলার যশিহাটী গ্রামে।

টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তানবীর আহম্মদ জানান, মারইয়ামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছিল। শুনানি শেষে বিচারক চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একই তথ্য জানিয়েছেন টাঙ্গাইল আদালত পুলিশের পরিদর্শক লুৎফর রহমান।

পুলিশ জানায়, রোববার রাতে সাবেক এমপি জোয়াহেরুল ইসলামের স্ত্রী রওশন আরা খান বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় একটি মামলা করেন। এতে আসামি হিসেবে মারইয়াম মুকাদ্দাসের নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া তাঁর সহযোগী হিসেবে আরও অজ্ঞাতনামা ৮–৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত শনিবার বেলা ১১টার দিকে টাঙ্গাইল শহরের আকুরটাকুর পাড়া ছোট কালীবাড়ি সড়কে বাদী পারিবারিক পাঁচ তলা ভবনের কেচি ফটকের ছয়টি তালা ভেঙে মারইয়াম মুকাদ্দাস অজ্ঞাতনামা ৮–৯ জনকে সঙ্গে নিয়ে ভবনে প্রবেশ করেন। তাঁরা নগদ ৫ লাখ টাকা, ১০ ভরি স্বর্ণালংকার চুরি করে নিয়ে যান। এ ছাড়া আসবাব ভাঙচুর করে আনুমানিক ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি সাধন করেন। পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাঁরা ১৭ জন মানসিক ভারসাম্যহীন ছিন্নমূল মানুষকে ভবনের কক্ষে প্রবেশ করিয়ে বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে রাখেন।

ঘটনার খবর পেয়ে ওই দিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাদী রওশন আরা খান বাসায় গিয়ে মারইয়াম মুকাদ্দাসকে ঘটনার বিষয় জিজ্ঞাসা করেন বলে মামলা থেকে জানা গেছে। এ সময় মারইয়াম ক্ষিপ্ত হয়ে রওশন আরাকে বলেন, এই বাড়িতে বসবাস করতে হলে ১০ কোটি টাকা চাঁদা দিতে হবে। অন্যথায় আগামী সাত দিনের মধ্যে বাড়িটি পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, মারইয়াম মুকাদ্দাসের নেতৃত্বে ৬ ফেব্রুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য প্রয়াত সভাপতি ফজলুর রহমান খান, সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম ও সাবেক পৌর মেয়র জামিলুর রহমানের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এরপর মারিয়াম আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি দখল করে বৃদ্ধাশ্রম, পাগলদের আশ্রম, পশু আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলার ঘোষণা দেন।

গত শনিবার জোয়াহেরুল ইসলামের বাড়ি দখল করে ছিন্নমূল মানসিক ভারসম্যহীন মানুষদের উঠানো হয়। পরে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নেতৃত্বে ১৮ জন ছিন্নমূল মানুষকে উদ্ধার করে দখল হওয়া বাড়িটি খালি করা হয়। শনিবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে মুচলেকা নিয়ে মারইয়ামকে ছেড়ে দেওয়া হয়। গতকাল তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হলে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।