এবার দফা বেড়েছে, তবে আগের ইশতেহারের অনেক কিছুই পূরণ করতে পারেননি তালুকদার খালেক

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। আজ দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবের শেখ আবু নাসের ব্যাংকুয়েট হলেছবি: প্রথম আলো

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক এবারের ইশতেহারে ৪০টি পরিকল্পনার (ইশতেহার) কথা বলেছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে তিনি ৩১ দফা পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর গত পাঁচ বছরে তাঁর জনগুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ইশতেহার বাস্তবায়ন করতে পারেননি। এবার দফা বাড়ানো হলেও আগেরবারের কিছু দফা তিনি এবার রাখেননি।

আজ মঙ্গলবার খুলনা প্রেসক্লাবের শেখ আবু নাসের ব্যাংকুয়েট হলে ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি।

গতবার জলাবদ্ধতা নিরসনে বড় ভূমিকা রাখার আশ্বাস দিয়েছিলেন তালুকদার আবদুল খালেক। কিন্তু এখনো সামান্য বৃষ্টি হলেই নগরের অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। গতবার তিনি নগর সরকারব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্যোগের কথা বলেছিলেন, কিন্তু সেই ব্যাপারেও কোনো পদক্ষেপ নেননি। এবারের ইশতেহারে ওই দফাটিই বাদ দিয়েছেন খালেক। পাশাপাশি বাদ দিয়েছেন নতুন আয়ের উৎস সৃষ্টি, সিটি সেন্টার গড়ে তোলা, বিনা মূল্যে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করার দফাগুলো।

নতুন করে তালুকদার আবদুল খালেকের ইশতেহারে যুক্ত হয়েছে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে নর্দমা পরিষ্কার, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সুলভ মূল্যে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা, সূর্যোদয়ের আগেই পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, অনুদান তহবিল গঠন, জলাশয় ও পুকুরগুলো সংরক্ষণের মতো দফা।

আরও পড়ুন

গতবার দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে না পারার কথা স্বীকার করেছেন তালুকদার আবদুল খালেক। এবার ইশতেহারের শুরুতে তিনি বলেন, গত নির্বাচনে দায়িত্ব গ্রহণের আগেই ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার দুটি প্রকল্প অনুমোদন করেন প্রধানমন্ত্রী। ‘খুলনা সিটি করপোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা উন্নয়ন ও পুনর্বাসন’ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ৬০৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। নগরের ৫৭১টি সড়ক উন্নয়নের জন্য ওই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ইতিমধ্যে ৪১৮টি সড়কের উন্নয়নকাজ শেষ হয়েছে, চলমান রয়েছে ১১৪টি ও টেন্ডারের অপেক্ষায় আছে ৩৯টি সড়ক।

এ ছাড়া ‘খুলনা শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ–ব্যবস্থার উন্নয়ন’ নামের আরেকটি প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮২৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। নগরের ২০৬টি ড্রেন উন্নয়নের জন্য ওই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে ৫২টি ড্রেনের কাজ শেষ হয়েছে, ৮৫টি চলমান এবং ৭২টি টেন্ডারের অপেক্ষায় রয়েছে। এসব বড় প্রকল্পের বাইরে আরও প্রায় এক হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্প চলমান আছে। করোনাসহ বৈশ্বিক বিভিন্ন কারণে ওই কাজগুলো শেষ করা যায়নি। জনগণ তাঁকে আবারও নির্বাচিত করলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে খুলনা শহর নির্দিষ্ট একটি বৈশিষ্ট্য নিয়ে নাগরিকদের সামনে দৃশ্যমান হবে বলে বিশ্বাস করেন বর্তমান মেয়র খালেক।

জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খুলনা জেলা শাখার সম্পাদক কুদরত-ই-খুদা প্রথম আলোকে বলেন, গতবারের দেওয়া প্রতিশ্রুতির ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ পূরণ করতে পেরেছেন তালুকদার আবদুল খালেক। অবশ্য অনেক উন্নয়নকাজ চলমান। ওই কাজগুলো শেষ হলে নগরের অনেকটা পরিবর্তন আসতে পারে। তবে কাজগুলো অনেক ধীরগতিতে হওয়ায় মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে।

কুদরত-ই-খুদা বলেন, প্রতিটি বড় শহরেই নগর সরকারব্যবস্থা চালু করা উচিত। এতে শহরের মধ্যে থাকা বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় সম্ভব হয়। গতবার তালুকদার আবদুল খালেকের ইশতেহারের প্রথম দফাই ছিল সিটি গভর্নমেন্ট ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া। কিন্তু প্রথম উদ্যোগটিই তিনি বাস্তবায়ন করতে পারেননি। এই ব্যবস্থা থাকলে অর্থ অপচয়ের পাশাপাশি মানুষের ভোগান্তিও কমত।

এবারের ইশতেহারে যা আছে

পাঁচ বছর আগে তালুকদার আবদুল খালেকের দেওয়া ইশতেহারের এবারের ইশতেহারের অনেক মিল আছে। ইশতেহারে এবার নগরকে আধুনিক, পরিবেশবান্ধব ও স্মার্ট নগর হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

খালেকের ইশতেহারের ৪০ দফার মধ্যে রয়েছে পরিচ্ছন্ন, সবুজ ও পরিবেশবান্ধব খুলনা গড়ে তোলা; পার্ক-উদ্যান নির্মাণ ও বনায়ন; জলাবদ্ধতা দূরীকরণে বিশেষ ব্যবস্থা; স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে নালা পরিষ্কার; আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা; বৃক্ষ পরিচর্যা ও সংরক্ষণ; স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন ও নিরাপদ স্বাস্থ্যকর খুলনা; সুলভ মূল্যে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা; সূর্যোদয়ের আগেই পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম; মাদকমুক্ত নগর গড়ে তোলা; সড়কে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা; পথচারীবান্ধব ফুটপাত; বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান উপযোগী নগর গড়ে তোলা; সিভিক সেন্টার গড়ে তোলা; অনুদান তহবিল চালু, মিডিয়া সেন্টার চালু ও সেরা সংবাদ পুরস্কার প্রবর্তন; কবরস্থান ও শ্মশানঘাটের উন্নয়ন; মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিবছর প্রতিযোগিতার আয়োজন; স্মার্ট ও ডিজিটাল খুলনা; নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মানচিত্র প্রদর্শন; অংশগ্রহণমূলক ও সুশাসিত খুলনা গড়ে তোলা; ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেল স্থাপন; হটলাইন ও নগর তথ্যকেন্দ্র চালু; পরিকল্পনা প্রণয়নে পরামর্শক কমিটি গঠন; সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের উন্নয়ন ও বিকাশ ঘটানো; জলাশয় ও পুকুরগুলো সংরক্ষণ; শিশুদের সাঁতার শেখানোর বিশেষ উদ্যোগ; নগরীর বাজারগুলো আধুনিকায়ন; হোল্ডিং ট্যাক্স না বাড়িয়ে সেবার মান বৃদ্ধি; বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নামে রাস্তার নামকরণ; বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণ; যাতায়াত ও ট্রাফিক–ব্যবস্থার উন্নয়ন; শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন; নারী উন্নয়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা প্রদান; সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ; ওয়াসা, কেডিএ, রেলওয়ে, টেলিকমিউনিকেশন ও বিদ্যুৎ পরিষেবা উন্নয়ন; কেসিসিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা; উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ে বুলেটিন প্রকাশ এবং খুলনা মহানগরের সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান প্রথম আলোকে বলেন, ইশতেহারে যা ঘোষণা করা হয়, তা সবই নগরবাসীর উপকারের জন্য থাকে। কিন্তু ওই ইশতেহার কতটুকু বাস্তবায়ন হবে বা করা যাবে, সেটিই মূল বিষয়। ইশতেহার বাস্তবায়ন করা গেলে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা অনেক বাড়বে।