যশোরে ইন্টার্ন চিকিৎসককে মারধরের ৯ দিনেও মামলা নেয়নি পুলিশ, আদালতে পরিবার
যশোর মেডিকেল কলেজের (যমেক) ইন্টার্ন চিকিৎসক জাকির হোসেনকে পিটিয়ে হাত ও পা ভেঙে দেওয়ার ঘটনায় ৯ দিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। বাধ্য হয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে জাকিরের পরিবার।
বৃহস্পতিবার যশোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালতে মামলার আবেদন করেন আহত জাকিরের ভাই জাহাঙ্গীর আলম। আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মঞ্জুরুল ইসলাম আবেদনটি আমলে নিয়ে এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার জন্য যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন এবং তিন দিনের মধ্যে আদালতকে জানাতে বলেছেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী কাজী ফরিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলার আরজিতে আমরা বলেছি, যশোর কোতোয়ালি থানায় মামলা করতে ব্যর্থ হয়ে বাধ্য হয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। অভিযোগ দেওয়ার ৯ দিনেও পুলিশ মামলা হিসেবে গ্রহণ করেনি। আদালত অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করার জন্য কোতোয়ালি থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে মামলা গ্রহণের তিন দিনের মধ্যে আদালতকে জানাতে বলেছেন।’
মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, মামলার অভিযোগে সাতজনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন ইন্টার্ন চিকিৎসক, দুজন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও দুজন বহিরাগত।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, জাকির হোসেন যশোর মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসেবে আবাসিক হলের ১০৫ নম্বর কক্ষে থাকতেন। জাকিরের পাশের কক্ষে মাদক সেবন করতেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। পড়াশোনায় অসুবিধা হওয়ায় জাকির প্রতিবাদ করায় তাঁকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন তাঁরা। ৩১ জানুয়ারি ১০২ নম্বর কক্ষে আসামিরা গাঁজা সেবন করে হইচই করছিলেন। তখন জাকির তাঁদের নিষেধ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রাত পৌনে নয়টার দিকে জাকিরের কক্ষে গিয়ে আসামিরা হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে হত্যাচেষ্টা চালান এবং তাঁর ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, কাগজপত্র ও চাবি নিয়ে যান। জাকিরের চিৎকারে আশপাশের কক্ষের আবাসিক ছাত্ররা এসে তাঁকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।
ঘটনার পর জাকিরের স্বজনেরা কোতোয়ালি থানায় একটি অভিযোগ দেন। কিন্তু পুলিশ অভিযোগটি গ্রহণ করেনি। এ জন্য আদালতে মামলার আবেদন করে জাকিরের পরিবার।
বাদী জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ করে বলেন, ২ ফেব্রুয়ারি থানায় অভিযোগ দিলেও মামলার নথি গ্রহণ করেনি পুলিশ। এ ছাড়া কলেজ প্রশাসনের তদন্তে অগ্রগতি না দেখে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা।
কোতোয়ালি থানার ওসি তাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মামলার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে মামলা নেওয়া হয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ ওই ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কর্তৃপক্ষ তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর মামলা নেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। এ জন্য তাঁরা মামলা গ্রহণ করেননি। তবে আদালত যেহেতু আদেশ দিয়েছেন, আদেশের কপি হাতে পেলে অবশ্যই মামলা নেওয়া হবে।
যশোর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মহিদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, তদন্তের স্বার্থে কমিটি আরও পাঁচ দিনের সময় চেয়েছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য কমিটির সময় বাড়ানো হয়েছে।
এর আগে আরও দুদিন সময় চেয়েছিল পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি। বর্ধিত সময় আজ শেষ হয়। একই সঙ্গে প্রাথমিক অভিযুক্তরা ছাত্রাবাসের যে তিনটি কক্ষে থাকতেন, তা সিলগালা করে দেওয়া হয়।