৪৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করলেন কুমিল্লার শিবির নেতা

কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি আশেক এলাহীর সংবাদ সম্মেলন। সোমবার বিকেলে কুমিল্লা নগরের টমছমব্রিজ এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি আশেক এলাহী সংবাদ সম্মেলন করে মানব পাচারে জড়িত হয়ে ৪৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ নাকচ করেছেন। আজ সোমবার বিকেলে কুমিল্লা নগরের টমছমব্রিজ এলাকায় এই সংবাদ সম্মেলন করেছেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে আশেক এলাহী দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়ার কথা বলে নেপালে জিম্মি করে ৪৫ লাখ টাকা আদায় ও মানব পাচার নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে করা অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তিনি মানব পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত নন। উল্টো তিনি নিজেও তারেক আজিজের মতো প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

এর আগে তারেক আজিজ নামে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের এক তরুণ গত শনিবার ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা আশেক এলাহীর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেন। তারেক আজিজ মনোহরগঞ্জ উপজেলার মৈশাতুয়া ইউনিয়নের খানাতুয়া গ্রামের মো. কামাল হোসেনের ছেলে। তারেক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়ার কথা বলে নেপাল নিয়ে জিম্মি করে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৪৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আশেক এলাহী।

আশেক মনোহরগঞ্জ উপজেলার তাহেরপুর গ্রামের প্রয়াত ইছহাক মিয়ার ছেলে। তিনি বর্তমানে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। আজ পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আশেক এলাহী বলেন, ‘তারেকের মিথ্যাচারের কারণে আমাকে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। তারেক আজিজ বা তাঁর বাবা কামাল হোসেনের সঙ্গে আমার আমেরিকা যাওয়ার বিষয়ে কোনো প্রকার চুক্তি হয়নি। কোনো প্রকার লেনদেনও হয়নি। আমার কোনো এজেন্সিও নেই। তাঁদের কাছে কোনো প্রমাণ নেই, এরপরও আমার বিরুদ্ধে তাঁরা সংবাদ সম্মেলন করে মিথ্যাচার করেছেন। জোবায়ের হোসেন নামে নোয়াখালীর সেনবাগের ছাতারপাইয়ার এক ব্যক্তি তারেক আজিজের বাবার পূর্বপরিচিত। সেই সুবাদে তারেকের বাবা আমাকে প্রস্তাব করেন, জোবায়ের আমেরিকা লোক পাঠান। পরে জোবায়েরের সঙ্গে আমাদের দেখা করিয়ে দেন তিনি। পরবর্তী সময়ে তারেকের বাবা আমাকে তাঁর মাধ্যমে আমেরিকা যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন এবং আমি এতে রাজি হই। জোবায়েরের সঙ্গে আমি, তারেকসহ কয়েকজন ২০২৩ সালের ৭ ডিসেম্বর নেপালে যাই। পরে সেখানে জোবায়ের আমাদের কয়েকজনকে জিম্মি করেন। জিম্মি করে আমাদের সবার মুঠোফোন, পাসপোর্ট ও অন্যান্য কাগজপত্র কেড়ে নেওয়া হয়। পরে অন্যদের মতো আমরা প্রাণের ভয়ে আমার পরিবারকে বললে আমার বাবা নগদ এবং ব্যাংকের মাধ্যমে ৪০ লাখ টাকা জোবায়েরকে পরিশোধ করেন। টাকা পেয়ে জোবায়েরের নেপালি মাফিয়া চক্র আমাদের ছেড়ে দেয়। আমি নিজে তারেকের মতোই একজন ভুক্তভোগী। আমি অর্থসম্পদ হারিয়ে এখন নিঃস্ব অবস্থায় আছি।’

আশেক এলাহী আরও বলেন, ‘আমরা পরে এ ঘটনায় নেপালের বাংলাদেশ হাইকমিশনে মামলা করে সবাই দেশে আসি। ওই সময় তারেক আজিজ বাদী হয়ে নেপাল পুলিশ এবং নেপালে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনে মানব পাচারকারী হিসেবে জোবায়েরের নামে অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগের মধ্যে তারেক আজিজের স্বাক্ষরও রয়েছে। দেশে এসে তারেক আজিজ ও আমার এলাকা পাশাপাশি হওয়ার কারণে তাঁরা আমাকে অন্যায়ভাবে দায়ী করেন এবং আমি জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে মনোহরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে চুক্তি করে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা শুরু করেন। তারেকের পরিবারের সঙ্গে চুক্তি করে উপজেলা ছাত্রলীগ সেক্রেটারি বিপ্লব ১০০ থেকে ১৫০ জন সন্ত্রাসী নিয়ে আমার বাড়িতে ২০২৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর হামলা করেন এবং আমার মায়ের কাছ থেকে জোরপূর্বক চারটি খালি ব্যাংক চেক ও ২০টি খালি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন। ২০২৪ সালের ১৭ মার্চ আমি বাড়িতে গেলে তারেকের বাবা কামাল হোসেন সন্ত্রাসী নিয়ে আমার বাড়িতে আবারও হামলা করেন এবং আমার চাচা মো. ইয়াছিনের কাছ থেকে পাঁচটি খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন। খালি চেক ও খালি স্ট্যাম্প উদ্ধারের জন্য আমরা আদালতে মামলাও করেছি। পরে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে অবৈধভাবে নেওয়া চেক ও স্ট্যাম্প দিয়ে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে আমার ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে মানব পাচার আইনে মামলা করেন। সেখানে প্রকৃত অভিযুক্ত জোবায়ের হোসেনকে আসামি করা হয়নি। দেশে আসার পর আমিসহ কয়েকজন ভুক্তভোগী মতিঝিল থানায় জোবায়েরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি। জোবায়েরের সঙ্গে এসব ঘটনায় কিশোরগঞ্জের মাসুদও জড়িত। জোবায়ের ও মাসুদ এখনো পলাতক।’

আশেক এলাহী বলেন, ‘তারেকের করা মামলায় আমিসহ সব আসামি জামিনে রয়েছি। আমি জামিনে থাকার পরও তারেক ও তাঁর মামা আমজাদ হোসেন নিয়মিত আমাকে ও আমার পরিবারকে বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। তারেক ও তাঁর বাবা ৫ আগস্টের পূর্বে করা মামলায় আমাকে ও আমার পরিবারকে অন্যায়ভাবে জড়িয়েছেন। এখনো কিছু আওয়ামী দোসরকে দিয়ে আমাকে ও আমার পরিবারের মানহানি করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন এবং আমার রাজনৈতিক দলের নামে বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছেন তাঁরা। আমি সাবেক শিবির ও বর্তমানে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় তাঁরা আমাকে আওয়ামী দোসরদের পরামর্শে হয়রানি করছেন। তারেক আজিজের করা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। তিনি আওয়ামী দোসরদের প্ররোচনায় প্রকৃত আসামিকে আড়াল করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করছেন।’

আজ বিকেলে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুঠোফোনে তারেক আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নোয়াখালীর জোবায়ের নামের কাউকে আমরা চিনি না। আমাদের চুক্তি হয়েছে আশেক এলাহীর সঙ্গে। জোবায়ের, এই নামটা নতুন করে শুনছি আশেক এলাহীর মুখে। আশেক এলাহী আমাদের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আমার কাছে সব প্রমাণ আছে। আমি তাঁর বিচার চাই।’