আন্দোলন করে পাটকল চালুর ব্যবস্থা করতে হবে: খুলনায় জোনায়েদ সাকি

পাটকল রক্ষায় নাগরিক পরিষদের আয়োজনে খুলনায় জাতীয় পাট কনভেনশনে বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। শনিবার বিকেলে খুলনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

দেশে ভবিষ্যতে গণমানুষের সরকার না হলেও আন্দোলনের মাধ্যমে পাটকল চালুর ব্যবস্থা করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। আজ শনিবার বিকেলে খুলনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জাতীয় পাট কনভেনশনে তিনি এ মন্তব্য করেন। পাটকল রক্ষায় নাগরিক পরিষদ এ সম্মেলনের আয়োজন করে।

পাটকল ও চিনিকল বন্ধের সমালোচনা করে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘বর্তমান সরকার দেশের চিনিকল বন্ধ করে দিয়েছে। আজ চিনির দাম কোথায় গিয়ে ঠেকেছে, এর পুরো দায়ভার সাধারণ মানুষের ওপর গিয়ে পড়ছে। এটাই তাঁরা করতে পারেন। এটা উদ্দেশ্যমূলকভাবেই করা হয়। কাজেই আগামী দিনে যেহেতু পাট আমাদের নিত্যব্যবহার্য জিনিস, তাই এটা রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানায় উৎপাদন ও বিপণন করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘এই সরকার শ্রমিকদের কোনো দাবি পূরণ করবে না। পাওনা টাকার জন্য পাটকলশ্রমিকদের মাথা ঠুকতে হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে। এই হচ্ছে আমাদের চ্যাম্পিয়ন সরকার। আগামীতে যদি কোনো গণমানুষের সরকার না-ও হয়, তাহলে আন্দোলন করে পাটকল চালুর ব্যবস্থা করতে হবে।’

জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, ‘এই ফ্যাসিবাদী কর্তৃত্ববাদী সরকার মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। যারা নাগরিক হিসেবে আমাদের খারিজ করে দিয়েছে, তাদের উৎখাত করার জন্য এবং দেশের মানুষের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যে লড়াই চলছে, এই লড়াইয়ের যৌথ ঘোষণায় পাটকল চালুর কথা আছে। আগামী দিনের সরকার বাধ্যতামূলকভাবে পাটকল চালু করতে বাধ্য থাকবে।’

নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক কুদরত-ই-খুদার সভাপতিত্বে এবং সদস্যসচিব এস এ রশীদের সঞ্চালনে পাট সম্মেলনে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেত্রী সুতপা বেদজ্ঞ। এতে অন্যান্যের মধ্যে সিপিবির সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবীর প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সম্মেলনে বক্তারা বলেন, করোনাকালে যখন অসংখ্য মানুষ কর্মহীন, খাদ্য ও চিকিৎসা–সংকটে বিপর্যস্ত, যখন বিশ্বজুড়ে একদিকে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রগুলো মজবুত করার চেষ্টা চলছে, যখন পরিবেশবান্ধব শিল্প ও অর্থনৈতিক তৎপরতাকে গুরুত্ব দেওয়ার তাগিদ বাড়ছে, ঠিক সেই সময়ে লক্ষাধিক শ্রমিক ও কৃষক পরিবারকে অনিশ্চয়তায় ২৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সরকার কারখানা বন্ধের দুই মাসের মধ্যে সব পাওনা পরিশোধের অঙ্গীকার করলেও এখনো অনেক শ্রমিক তাঁদের বকেয়া পাওনা পাননি। এ ছাড়া বিভিন্ন মিলের শ্রমিকেরা, যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা আছে, তাঁদের দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করে বকেয়া পরিশোধ করা হচ্ছে না। ফলে শ্রমিকেরা নিদারুণ উৎকণ্ঠার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন।

সম্মেলনে ইজারা বা ব্যক্তিমালিকানায় নয়; বন্ধ সব রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল অবিলম্বে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় চালু, আগামী বাজেটে পাট খাতে বিশেষ বরাদ্দ, সব শ্রমিকের পাওনা ঈদুল আজহার আগে দেওয়ার দাবি জানান বক্তারা।