প্রায় অর্ধকোটি টাকা খরচ করেও যমুনা তীরের বিদ্যালয়টি রক্ষা করা গেল না
যমুনা নদীর ভাঙনে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার নিজভারেঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ঝুঁকিতে পড়ে। ভাঙন রোধে প্রায় ৪২ লাখ টাকা খরচ করে নদীর তীরে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এরপরও শেষ রক্ষা হয়নি বিদ্যালয়টির। ঈদের দিন শনিবার দুপুরে তিনতলাবিশিষ্ট বিদ্যালয়ের ভবনটি নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, যমুনা নদীবেষ্টিত দৌলতপুর উপজেলার দুর্গম বাচামারা ইউনিয়নের চর ভারেঙ্গা মৌজায় বিদ্যালয়টির অবস্থান। ১৯৯০ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০১৩ সালে সরকারি হয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) দুই দফায় বিদ্যালয়ের তিনতলাবিশিষ্ট ভবনটি নির্মাণ করে। এতে প্রায় এক কোটি চার লাখ টাকা ব্যয় হয়।
প্রতিবছর নদীভাঙনের ফলে বিদ্যালয়টিও ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়ে। গত বছর বর্ষা মৌসুমে ভাঙন রোধে বিদ্যালয়টির পূর্ব পাশে নদীতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে পাউবো। চলতি বছরের মার্চ মাসে প্রায় আট লাখ টাকা খরচ করে বিদ্যালয়টিতে ওয়াশ ব্লক তৈরি করা হয়। সম্প্রতি নদীতে পানি বাড়ায় প্রবল স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার পানির তোড়ে বিদ্যালয় ভবনটির নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে ভবনের একাংশ দেবে যায়। এরপর গত শনিবার দুপুরে বিদ্যালয়টি তিনতলাবিশিষ্ট পুরো ভবন নদীতে ধসে যায়।
যোগাযোগ করা হলে উপজেলা প্রকৌশলী এনামুল সালেহীন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি সম্প্রতি এ উপজেলায় যোগদান করেছেন। ঈদের ছুটির মধ্যেই বিদ্যালয়ের ভবনটি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
স্থানীয় লোকজন জানায়, মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে যমুনা নদী। উপজেলার বাচামারা, চরকাটারী, বাঘুটিয়া ও জিয়নপুর ইউনিয়ন ভাঙনকবলিত এলাকা। চরকাটারী ইউনিয়নের প্রায় পুরোটাই নদীগর্ভে চলে গেছে। প্রতিবছরই ভাঙনের কারণে এসব ইউনিয়নের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি ক্লিনিক, মসজিদ-মাদ্রাসা, হাটবাজারসহ হাজার হাজার বিঘা জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
অনেকের বসতভিটা ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। এখনো যাঁদের ঘরবাড়ি নদীর তীরে আছে, তাঁরা আছেন আতঙ্কে। কারণ, যেকোনো সময় তাঁদের ঘর, গাছপালা ও জমি নদীতে চলে যেতে পারে। এ পরিবারগুলো উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দৌলতপুরের পাচুরিয়া, বাঘুটিয়া বাজার, পারুরিয়া বাজার, রাহাতপুর, চর কালিয়াপুর, বাঘুটিয়া, ভারাঙ্গা, বিষ্ণুপুর, আবুডাঙ্গা পূর্ব পাড়া, চরকাটারী বোর্ডঘর বাজার, চরকাটারী সবুজসেনা হাইস্কুল, চরভারাঙ্গা সরকারপাড়া, মজম শেকেরপাড়া, বাচামারা পশ্চিম পাড়া, উত্তরখণ্ড, সুবুদ্ধি, বৈন্যাঘাট, লাউতাড়া, লাউতাড়া আশ্রয়ণ কেন্দ্র, চকবাড়াদিয়া, চকমিরপুর, ভাঙা রামচন্দ্রপুর, রামচন্দ্রপুর নতুনপাড়া, হাতকোড়া, চরমাস্তল, বিষ্ণুপুর খাঁ পাড়া, পারমাস্তলসহ নদীতীরবর্তী আরও কয়েকটি গ্রাম যমুনা নদীর ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক কামাল পাশা প্রথম আলোকে বলেন, গত বছর প্রায় এক কোটি টাকা খরচ করে বিদ্যালয়ের প্রায় ২০ গজ দূরে নদীতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়। কিন্তু এতে কোনো কাজ হয়নি। এ ছাড়া প্রায় তিন মাস আগে প্রায় আট লাখ টাকা খরচ করে বিদ্যালয়ে ওয়াশ ব্লক নির্মাণ করা হয়। নদীভাঙনে বিদ্যালয়ের কোটির টাকার ভবনটিও বিলীন হয়ে গেল, পাশাপাশি নদীভাঙন রোধে সরকারের বিপুল অর্থ ব্যয় হলেও তা কোনো কাজে আসেনি।
বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে দুজন শিক্ষার্থী (ছাত্রী) রয়েছে বলে জানান প্রধান শিক্ষক কামাল পাশা। শিক্ষার্থী কম থাকার বিষয়ে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
পাউবো বলছে, নদীবেষ্টিত চরাঞ্চলে কারিগরি সমীক্ষা ছাড়া বহুতল বা পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ধরনের নির্মাণকাজ থেকে সরে আসতে হবে। মানিকগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামানের ভাষ্য, দুর্গম বালুর চরে কারিগরি সমীক্ষা ছাড়া বিদ্যালয়টির তিনতলাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণ যুক্তিসংগত হয়নি। নদীতীরবর্তী চরাঞ্চলে সহজে স্থানান্তরযোগ্য অবকাঠামো নির্মাণের ওপর জোর দেন পাউবোর এই কর্মকর্তা।